ঢাকা ১২:০৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আড়াইহাজারে ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা, ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পরিবার ও পুলিশের

  • চেতনায়২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৬:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২১৭ বার পড়া হয়েছে

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের দাবি, মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করায় পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আর পুলিশ বলছে, চাঁদা দাবি করায় তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে উপজেলার বালিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মো. সোহেল (৩৮) বালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে। গত ১৩ জুন কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় র‌্যাব-১১-এর অভিযানে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে জামিনে মুক্তি পান। আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নাসির উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খন্দকার নাসির উদ্দিন জানান, আজ সোমবার সকালে বালিয়াপাড়ায় একটি নির্মাণাধীন মার্কেটের মালিক শরীফ হোসেনের কাছে চাঁদা দাবি করেন সোহেল। পরে শরীফ হোসেনের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তাঁরা গ্রামবাসীকে জড়ো করেন। আগে থেকেই সোহেলের মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজির কারণে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাঁকে আটক করে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশ বালিয়াপাড়া বটতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।

সোহেলের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জান্নাত আক্তার দাবি করেন, এলাকায় মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে কথা বলায় পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সকাল সাতটার দিকে একটি ফোন পেয়ে সোহেল ভাই বাড়ি থেকে বের হন। দেড় ঘণ্টার মধ্যে আমরা তাঁর মৃত্যুর খবর পাই। তাঁর বিরুদ্ধে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হচ্ছে, এগুলো সব মিথ্যা।’ তবে তিনি সুনির্দিষ্ট কারও নাম উল্লেখ করেননি।

এ ঘটনায় নির্মাণাধীন ওই মার্কেটের মালিক শরীফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মো. সোহেল একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু এবং ব্রাহ্মন্দী ইউপির চেয়ারম্যান মো. লাক মিয়ার ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। সেই সূত্রে তিনি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্যপদ পান। তবে পরবর্তী সময়ে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে ২০২৩ সালের অক্টোবরে তাঁর বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। বিলুপ্ত করা হয় ওয়ার্ড কমিটি। সে সময় তিনি স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দায়ী করেছিলেন।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বালিয়াপাড়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলেকে বলেন, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও পরে এলাকায় ফিরে সোহেল স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সম্প্রতি তিনি আবারও মাদক ব্যবসা, অস্ত্রের মহড়া ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করেন। এ সময় নতুন কিছু মাদক কারবারির সঙ্গে তাঁর বিরোধ দেখা দেয়। সেই বিরোধের জেরে ৭ সেপ্টেম্বর তাঁর বাড়িতে আবার আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, আগুন দেওয়ার ওই ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। তবে মো. সোহেলের মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

আড়াইহাজারে ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা, ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পরিবার ও পুলিশের

আপডেট সময় : ০৪:৪৬:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক ইউপি সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারের দাবি, মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করায় পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। আর পুলিশ বলছে, চাঁদা দাবি করায় তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে উপজেলার বালিয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মো. সোহেল (৩৮) বালিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে। গত ১৩ জুন কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় র‌্যাব-১১-এর অভিযানে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। পরে জামিনে মুক্তি পান। আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নাসির উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খন্দকার নাসির উদ্দিন জানান, আজ সোমবার সকালে বালিয়াপাড়ায় একটি নির্মাণাধীন মার্কেটের মালিক শরীফ হোসেনের কাছে চাঁদা দাবি করেন সোহেল। পরে শরীফ হোসেনের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে তাঁরা গ্রামবাসীকে জড়ো করেন। আগে থেকেই সোহেলের মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও অস্ত্রবাজির কারণে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাঁকে আটক করে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশ বালিয়াপাড়া বটতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে।

সোহেলের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জান্নাত আক্তার দাবি করেন, এলাকায় মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে কথা বলায় পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সকাল সাতটার দিকে একটি ফোন পেয়ে সোহেল ভাই বাড়ি থেকে বের হন। দেড় ঘণ্টার মধ্যে আমরা তাঁর মৃত্যুর খবর পাই। তাঁর বিরুদ্ধে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হচ্ছে, এগুলো সব মিথ্যা।’ তবে তিনি সুনির্দিষ্ট কারও নাম উল্লেখ করেননি।

এ ঘটনায় নির্মাণাধীন ওই মার্কেটের মালিক শরীফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মো. সোহেল একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু এবং ব্রাহ্মন্দী ইউপির চেয়ারম্যান মো. লাক মিয়ার ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। সেই সূত্রে তিনি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন এবং ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্যপদ পান। তবে পরবর্তী সময়ে সংসদ সদস্যদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে ২০২৩ সালের অক্টোবরে তাঁর বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। বিলুপ্ত করা হয় ওয়ার্ড কমিটি। সে সময় তিনি স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দায়ী করেছিলেন।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বালিয়াপাড়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলেকে বলেন, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছুদিন আত্মগোপনে থাকলেও পরে এলাকায় ফিরে সোহেল স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সম্প্রতি তিনি আবারও মাদক ব্যবসা, অস্ত্রের মহড়া ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি করেন। এ সময় নতুন কিছু মাদক কারবারির সঙ্গে তাঁর বিরোধ দেখা দেয়। সেই বিরোধের জেরে ৭ সেপ্টেম্বর তাঁর বাড়িতে আবার আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

ওসি খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, আগুন দেওয়ার ওই ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। তবে মো. সোহেলের মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।