শিল্প এবং শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত নরসিংদী এখন পরিণত হয়েছে এক অব্যবস্থাপনার শহরে। সড়কের বেহাল দশা, অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ময়লা-আবর্জনার স্তুপ আর দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নরসিংদী পৌর এলাকার চিত্র যেন এক গভীর সংকটের নামান্তর।
খানাখন্দে ভরা রাস্তাগুলো শুধু যানবাহন চলাচল নয়, সাধারণ পথচারীদের জন্যও বড় ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ড্রেন উপচে পানি রাস্তায় ওঠে আসছে, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। পৌরবাসীদের দুর্ভোগ যেন প্রতিদিনের সঙ্গী।
শহরের রাঙ্গামাটি রোড, দত্তপাড়া রোড, ডিসি রোডসহ প্রায় সব সড়কের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারী ও অটোরিকশা যাত্রীরা। চালকদের অভিযোগ, এসব রাস্তায় যানবাহন চালানো যেমন কষ্টকর, তেমনি জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ।
পৌর শহরের বাসিন্দা ফেরদৌস হোসেন ভূঁইয়া বলেন, পথে চলাচল করাই এখন কষ্টকর। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। খাল-বিলের মতো হয়ে পড়ে রাস্তাগুলো। বছরের পর বছর ধরে এই সমস্যার সমাধান হয়নি।
শুধু রাস্তা নয়, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবস্থা আরও করুণ। পলি জমে ড্রেনগুলোর কার্যকারিতা প্রায় শূন্যে। শহরের অনেক এলাকা নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই সড়ক তলিয়ে যায়। ফলে বাসিন্দাদের ভোগান্তি আরও বাড়ে।
স্কুল শিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন, ‘নরসিংদীতে এখন হেঁটে চলাও কষ্টসাধ্য। রাস্তাগুলো ভাঙাচোরা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারে অকার্যকর। পানিতে ভিজে গেলে নামাজের ওজু নষ্ট হয়ে যায়, ফলে ধর্মীয় কাজেও বিঘ্ন ঘটে।’
অপর এক বাসিন্দা হাসানুজ্জামান সরকার বলেন, ‘নরসিংদী শহর দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো নয়। নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতে সমস্যা হয়।’
কলেজছাত্রী সুমা দাস বলেন, ‘নরসিংদীর সব রাস্তাই ভেঙে গেছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছি আমরা সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন সিএনজি উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে, আহত হচ্ছেন অনেকেই।’
শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দেখা যায়, বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে। মালাকার মোড়, ডিসি রোড, মাধবদী রোডসহ একাধিক এলাকায় ময়লার স্তুপের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্গন্ধ ও পরিবেশ দূষণ।
নরসিংদী ১৯৭২ সালে ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে এটি ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। একসময়ের সম্ভাবনাময় এই শহর এখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা হারিয়ে ফেলেছে।
শহরে রয়েছে বহু সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি গড়ে উঠেছে বিস্তীর্ণ শিল্পাঞ্চল। অথচ, এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি শহরের এই অব্যবস্থাপনা স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই তুলে ধরে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।
এ বিষয়ে নরসিংদী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিগগিরই মোবাইল মেইনটেন্যান্স কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। প্রাথমিকভাবে রাস্তাগুলো চলাচলের উপযোগী করার কাজ শুরু হবে।’
পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আসন্ন দুর্গাপূজার আগেই সড়কের বেশিরভাগ খানাখন্দ সংস্কার করা হবে। বাকি অংশ টেন্ডারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। পুরাতন ড্রেন ভেঙে নতুন ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। পাশাপাশি পৌরসভার লোকজন প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করবে এবং নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশনে ফেলে আসবে।’