ঢাকা ১০:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রংপুরে আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত

  • চেতনায়২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১২:৪৮:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫
  • ২৪৫ বার পড়া হয়েছে

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পর এবার কাউনিয়ায় দুইজন ও মিঠাপুকুর উপজেলায় একজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলার তিন উপজেলায় এ পর্যন্ত ১১ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলো। এছাড়াও পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ২ জন। এতে করে আতঙ্ক বাড়ছে সবার মাঝে। তবে স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে আতঙ্কের কিছু নেই। শুধু সময়মতো চিকিৎসা করালেই ভালো হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকালে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে পীরগাছা উপজেলায় আটজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছিল।

জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুইজন মারা গেছে। সেই সময়ে অ্যানথ্রাক্স রোগে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তি আক্রান্ত হন। তবে চিকিৎসকের মতে, ‌‘যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছিল; তবে মৃত্যুর কারণ অ্যানথ্রাক্স নয়।’ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে, স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ নড়েচড়ে বসে। পরে আইইডিসিআর’র একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করে, যার মধ্যে আটজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার একটি গরু অসুস্থ হয়। পরে সেই অসুস্থ গরু জবাই করা হলে আশপাশের লোকজন মাংস কাটাকাটি করেন। ঘটনার দুই দিন পর স্থানীয় চারজন সোহরাব হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, মনির হোসেন, মজিবর রহমানসহ কয়েকজন চর্মরোগে আক্রান্ত হন, বিষয়টি জানাজানি হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। পরে তাদের শরীর থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হলে, তাদের মধ্যে একজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।

অন্যদিকে রংপুর জেলার তিন উপজেলায় ১১ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় আতঙ্ক বাড়ছে মানুষের মাঝে। তাছাড়া পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে ২ জন মারা যাওয়ায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে। যার কারণে তারা গরু-ছাগলের মাংস খেতে ভয় পাচ্ছেন। শরীরের মধ্যে কোন ফুসকুড়ি উঠলেই তারা চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন।

তবে স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে আ্যানথ্রাক্স নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। শুধু সময়মতো চিকিৎসা করালেই ভালো হয়ে যাবে। তারপরও আমাদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) এম এ হালিম লাবলু বলেন, ইমাদপুরে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত অসুস্থ গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড় ও নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে আক্রান্তরা যাতে সামাজিকভাবে কোনো হেয় পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন, সে জন্য তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। আমরা এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। এছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগকে সকল গবাদি পশুকে টিকার আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।

রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ জানান, জেলার পীরগাছা, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও রংপুর সদরে ১ লাখ ৬৫ হাজার গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। টিকাদান কার্যক্রমের পর নতুন করে গবাদিপশুতে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়নি। আমরা পর্যায়ক্রমে জেলার সকল উপজেলায় এই টিকা কার্যক্রম চালাচ্ছি। এছাড়াও প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে মসজিদ, মন্দির, হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা জানান, যাতে করে পীরগাছার মতো মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় আ্যানথ্রাক্স না বাড়ে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগকে সকল গবাদিপশুকে টিকার আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোনো অসুস্থ গবাদিপশু যেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যাতে কেউ জবাই করতে না পারে সেই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য গত জুন, জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে পীরগাছা উপজেলায় প্রায় ২০০টি গরু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। একই সময়ে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুইজন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে। উপজেলায় চারটি ইউনিয়নে অন্তত ৫০ জন ব্যক্তি অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হন। এরমধ্যে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর বিশেষজ্ঞ দল পীরগাছা উপজেলার ৮ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করেছেন।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে প্রধান উপদেষ্টার ধন্যবাদ

রংপুরে আরও তিনজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত

আপডেট সময় : ১২:৪৮:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০২৫

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পর এবার কাউনিয়ায় দুইজন ও মিঠাপুকুর উপজেলায় একজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলার তিন উপজেলায় এ পর্যন্ত ১১ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলো। এছাড়াও পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে ২ জন। এতে করে আতঙ্ক বাড়ছে সবার মাঝে। তবে স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে আতঙ্কের কিছু নেই। শুধু সময়মতো চিকিৎসা করালেই ভালো হয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকালে রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে পীরগাছা উপজেলায় আটজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছিল।

জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুইজন মারা গেছে। সেই সময়ে অ্যানথ্রাক্স রোগে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অর্ধশত ব্যক্তি আক্রান্ত হন। তবে চিকিৎসকের মতে, ‌‘যে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু ছিল; তবে মৃত্যুর কারণ অ্যানথ্রাক্স নয়।’ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে, স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ নড়েচড়ে বসে। পরে আইইডিসিআর’র একটি প্রতিনিধিদল গত ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর এবং পারুল ইউনিয়নের অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ থাকা ১২ নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করে, যার মধ্যে আটজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়। ওই সময় ঘটনাস্থল থেকে অসুস্থ গরুর মাংসের নমুনা পরীক্ষা করে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছিল প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের আমাইপুর গ্রামের ইব্রাহিম মিয়ার একটি গরু অসুস্থ হয়। পরে সেই অসুস্থ গরু জবাই করা হলে আশপাশের লোকজন মাংস কাটাকাটি করেন। ঘটনার দুই দিন পর স্থানীয় চারজন সোহরাব হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, মনির হোসেন, মজিবর রহমানসহ কয়েকজন চর্মরোগে আক্রান্ত হন, বিষয়টি জানাজানি হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। পরে তাদের শরীর থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে পাঠানো হলে, তাদের মধ্যে একজনের অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়।

অন্যদিকে রংপুর জেলার তিন উপজেলায় ১১ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় আতঙ্ক বাড়ছে মানুষের মাঝে। তাছাড়া পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে ২ জন মারা যাওয়ায় আতঙ্ক আরও বেড়েছে। যার কারণে তারা গরু-ছাগলের মাংস খেতে ভয় পাচ্ছেন। শরীরের মধ্যে কোন ফুসকুড়ি উঠলেই তারা চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন।

তবে স্বাস্থ্যবিভাগ বলছে আ্যানথ্রাক্স নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। শুধু সময়মতো চিকিৎসা করালেই ভালো হয়ে যাবে। তারপরও আমাদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) এম এ হালিম লাবলু বলেন, ইমাদপুরে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত অসুস্থ গবাদিপশুর শ্লেষ্মা, লালা, রক্ত, মাংস, হাড় ও নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে আক্রান্তরা যাতে সামাজিকভাবে কোনো হেয় পরিস্থিতির মধ্যে না পড়েন, সে জন্য তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। আমরা এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। এছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগকে সকল গবাদি পশুকে টিকার আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে।

রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ জানান, জেলার পীরগাছা, কাউনিয়া, মিঠাপুকুর ও রংপুর সদরে ১ লাখ ৬৫ হাজার গবাদিপশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। টিকাদান কার্যক্রমের পর নতুন করে গবাদিপশুতে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়নি। আমরা পর্যায়ক্রমে জেলার সকল উপজেলায় এই টিকা কার্যক্রম চালাচ্ছি। এছাড়াও প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে ইতোমধ্যে মসজিদ, মন্দির, হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা জানান, যাতে করে পীরগাছার মতো মিঠাপুকুর ও কাউনিয়া উপজেলায় আ্যানথ্রাক্স না বাড়ে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগকে সকল গবাদিপশুকে টিকার আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোনো অসুস্থ গবাদিপশু যেন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যাতে কেউ জবাই করতে না পারে সেই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য গত জুন, জুলাই ও সেপ্টেম্বর মাসে পীরগাছা উপজেলায় প্রায় ২০০টি গরু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। একই সময়ে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুইজন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করে। উপজেলায় চারটি ইউনিয়নে অন্তত ৫০ জন ব্যক্তি অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হন। এরমধ্যে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এর বিশেষজ্ঞ দল পীরগাছা উপজেলার ৮ জন অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করেছেন।