ঢাকা ০২:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি, বছর শেষে চাপের শঙ্কা

  • চেতনায়২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৬:০৩:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২২১ বার পড়া হয়েছে
  • এডিপি বাস্তবায়ন কমে ২.৩৯ শতাংশ
  • সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি আগস্টে কমে ৮.২৯ শতাংশে
  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩১.১৭ বিলিয়ন ডলার
  • রফতানি আয় জুলাইয়ে ৪৭৭০.৫৯ মিলিয়ন ডলার
  • আগস্টে রাজস্ব আদায় ২৭১৬২ কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। জুলাই–আগস্ট সময়ে বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা আর প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে এই প্রবণতা দেখা দিয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এ ধারা অব্যাহত থাকলে বছরের শেষ দিকে আবারও হঠাৎ ব্যয় বাড়ানোর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হতে পারে ব্যাহত।

এদিকে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। আগস্ট মাসে সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি নেমে এসেছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে, যা জুলাই ২০২২ সালের পর সর্বনিম্ন। এর আগে সাত মাস ধারাবাহিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি কমলেও জুলাইয়ে সামান্য ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। তবে আগস্টে আবারও নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়। সম্প্রতি প্রকাশিত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মাসিক অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি দ্বি-অঙ্কে অবস্থান করলেও বর্তমানে তা স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে। অখাদ্য মুদ্রাস্ফীতিও ২০ মাস পর ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কিছুটা কমেছে। রাজস্ব শৃঙ্খলা রক্ষা, কড়া আর্থিক নীতি গ্রহণ, সরবরাহব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ, মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক বাজারে অনুকূল পরিস্থিতির ফলেই এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও–এর চালের মূল্যসূচক গত এক বছরে কমেছে, যদিও সামগ্রিক খাদ্যমূল্যসূচক এখনো তুলনামূলক বেশি রয়েছে।

চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আগস্ট মাসে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা জুলাইয়ে ছিল ৫১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মাঝারি চালের দাম কিছুটা কমায় এ স্বস্তি এসেছে। তবে ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত চালের দাম টানা বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছিল। চলতি বছরের বোরো মৌসুমের ফলন ভালো হলেও বাজারে তার প্রতিফলন আসতে দেরি হয়। জুনে সরকার ১৭ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ শুরু করে এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ২ লাখ মেট্রিক টনে। একই সময়ে ৮১ হাজার টন গম এবং প্রায় ২০ হাজার টন ধান সংগ্রহ করা হয়।

এছাড়া সরকার অর্ধ মিলিয়ন টন চাল শুল্কমুক্ত আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। আগস্টে বেসরকারি খাতও চাল আমদানি শুরু করে। বেনাপোল স্থলবন্দর চার মাস পর চাল আমদানিতে কার্যক্রম শুরু করে। জুলাই থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে ৫ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন চাল বাজারে ছাড়া হয়, যা গত বছরের একই সময়ে ছাড়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এ অবস্থায় আগামী মাসগুলোতে চালের দাম আরও কমতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থনীতির বহির্বাণিজ্য খাতেও ইতিবাচক চিত্র দেখা গেছে। রফতানি আয়ে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় আছে। একাধিক মাসে রফতানি আয় ৪০০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রফতানি আয় দাঁড়ায় ৪৬২৭ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলারে, ২০২৫ সালের মে মাসে ৪৭৩৭ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলারে এবং জুলাই মাসে ৪৭৭০ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। আগস্টেও এ প্রবণতা অব্যাহত থাকে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও স্থিতিশীল রয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ১২০ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে সীমিত ওঠানামা করছে। বাস্তব কার্যকর বিনিময় হার বা আরইইআর–এ সামান্য ওঠানামা থাকলেও তা ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যেখানে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৫ সালের আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে। জুন মাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ৭২ বিলিয়নে পৌঁছেছিল। বৈদেশিক বাণিজ্য, ঋণ পরিশোধ এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এ রিজার্ভ শক্তিশালী ভরসা দিচ্ছে।

55
উন্নয়ন বাস্তবায়নে ধীরগতি। ছবি: সংগৃহীত

ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি ও ঋণ প্রবৃদ্ধির মধ্যে বৈষম্য স্পষ্ট হয়েছে। জুন শেষে ব্যাংক আমানত প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশে, যা গত বছরের তুলনায় কম। তবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ঐতিহাসিকভাবে সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছে, যার মূল কারণ উচ্চ সুদহার, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংকগুলোর সতর্ক ঋণনীতি। বিপরীতে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ০৯ শতাংশে। কর আদায়ে ঘাটতি মেটাতে সরকারের ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে, যা বেসরকারি খাতকে কার্যত ঋণ থেকে বঞ্চিত করছে।

রাজস্ব আদায়ে আগস্ট মাসে লক্ষ্য পূরণ না হলেও প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ওই মাসে তিন উৎস থেকে ২৭ হাজার ১৬২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা কম। তবে গত বছরের একই মাসের তুলনায় রাজস্ব আয় বেড়েছে ৪ হাজার ৭২ কোটি টাকা বা ১৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ভ্যাট আদায় কিছুটা বেড়েছে, যদিও আমদানি-রফতানি এবং আয়কর খাতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন ধীরগতিতেই চলছে। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জুলাই–আগস্ট সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় কম। আগের বছর একই সময়ে এ হার ছিল ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। প্রশাসনিক জটিলতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ও অর্থ ছাড়ে বিলম্বের কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বছরের শেষে ব্যাকলোডেড ব্যয়ের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

সার্বিকভাবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনীতিতে একদিকে যেমন মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক খাতে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন এসেছে, তেমনি ব্যাংক খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের নিম্নগতি ও উন্নয়ন ব্যয়ের ধীরগতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। সামষ্টিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হলে মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির ভারসাম্য রক্ষা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির ওপর জোর দিতে হবে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি, বছর শেষে চাপের শঙ্কা

আপডেট সময় : ০৬:০৩:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • এডিপি বাস্তবায়ন কমে ২.৩৯ শতাংশ
  • সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি আগস্টে কমে ৮.২৯ শতাংশে
  • বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ৩১.১৭ বিলিয়ন ডলার
  • রফতানি আয় জুলাইয়ে ৪৭৭০.৫৯ মিলিয়ন ডলার
  • আগস্টে রাজস্ব আদায় ২৭১৬২ কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। জুলাই–আগস্ট সময়ে বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম। অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা আর প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে এই প্রবণতা দেখা দিয়েছে।

অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, এ ধারা অব্যাহত থাকলে বছরের শেষ দিকে আবারও হঠাৎ ব্যয় বাড়ানোর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হতে পারে ব্যাহত।

এদিকে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। আগস্ট মাসে সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি নেমে এসেছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে, যা জুলাই ২০২২ সালের পর সর্বনিম্ন। এর আগে সাত মাস ধারাবাহিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি কমলেও জুলাইয়ে সামান্য ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। তবে আগস্টে আবারও নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়। সম্প্রতি প্রকাশিত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) মাসিক অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় ধরে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি দ্বি-অঙ্কে অবস্থান করলেও বর্তমানে তা স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে। অখাদ্য মুদ্রাস্ফীতিও ২০ মাস পর ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কিছুটা কমেছে। রাজস্ব শৃঙ্খলা রক্ষা, কড়া আর্থিক নীতি গ্রহণ, সরবরাহব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ, মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা এবং বৈশ্বিক বাজারে অনুকূল পরিস্থিতির ফলেই এই উন্নতি সম্ভব হয়েছে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও–এর চালের মূল্যসূচক গত এক বছরে কমেছে, যদিও সামগ্রিক খাদ্যমূল্যসূচক এখনো তুলনামূলক বেশি রয়েছে।

চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানা পদক্ষেপও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আগস্ট মাসে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা জুলাইয়ে ছিল ৫১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মাঝারি চালের দাম কিছুটা কমায় এ স্বস্তি এসেছে। তবে ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত চালের দাম টানা বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছিল। চলতি বছরের বোরো মৌসুমের ফলন ভালো হলেও বাজারে তার প্রতিফলন আসতে দেরি হয়। জুনে সরকার ১৭ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ শুরু করে এবং সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ২ লাখ মেট্রিক টনে। একই সময়ে ৮১ হাজার টন গম এবং প্রায় ২০ হাজার টন ধান সংগ্রহ করা হয়।

এছাড়া সরকার অর্ধ মিলিয়ন টন চাল শুল্কমুক্ত আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। আগস্টে বেসরকারি খাতও চাল আমদানি শুরু করে। বেনাপোল স্থলবন্দর চার মাস পর চাল আমদানিতে কার্যক্রম শুরু করে। জুলাই থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি পর্যায়ে ৫ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন চাল বাজারে ছাড়া হয়, যা গত বছরের একই সময়ে ছাড়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এ অবস্থায় আগামী মাসগুলোতে চালের দাম আরও কমতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থনীতির বহির্বাণিজ্য খাতেও ইতিবাচক চিত্র দেখা গেছে। রফতানি আয়ে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় আছে। একাধিক মাসে রফতানি আয় ৪০০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে রফতানি আয় দাঁড়ায় ৪৬২৭ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলারে, ২০২৫ সালের মে মাসে ৪৭৩৭ দশমিক ৮৫ মিলিয়ন ডলারে এবং জুলাই মাসে ৪৭৭০ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। আগস্টেও এ প্রবণতা অব্যাহত থাকে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও স্থিতিশীল রয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ১২০ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে সীমিত ওঠানামা করছে। বাস্তব কার্যকর বিনিময় হার বা আরইইআর–এ সামান্য ওঠানামা থাকলেও তা ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এ সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যেখানে রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৫ সালের আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারে। জুন মাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ৭২ বিলিয়নে পৌঁছেছিল। বৈদেশিক বাণিজ্য, ঋণ পরিশোধ এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এ রিজার্ভ শক্তিশালী ভরসা দিচ্ছে।

55
উন্নয়ন বাস্তবায়নে ধীরগতি। ছবি: সংগৃহীত

ব্যাংকিং খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি ও ঋণ প্রবৃদ্ধির মধ্যে বৈষম্য স্পষ্ট হয়েছে। জুন শেষে ব্যাংক আমানত প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশে, যা গত বছরের তুলনায় কম। তবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ঐতিহাসিকভাবে সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৪৯ শতাংশে। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছে, যার মূল কারণ উচ্চ সুদহার, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যাংকগুলোর সতর্ক ঋণনীতি। বিপরীতে সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ০৯ শতাংশে। কর আদায়ে ঘাটতি মেটাতে সরকারের ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে, যা বেসরকারি খাতকে কার্যত ঋণ থেকে বঞ্চিত করছে।

রাজস্ব আদায়ে আগস্ট মাসে লক্ষ্য পূরণ না হলেও প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ওই মাসে তিন উৎস থেকে ২৭ হাজার ১৬২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা কম। তবে গত বছরের একই মাসের তুলনায় রাজস্ব আয় বেড়েছে ৪ হাজার ৭২ কোটি টাকা বা ১৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ভ্যাট আদায় কিছুটা বেড়েছে, যদিও আমদানি-রফতানি এবং আয়কর খাতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন ধীরগতিতেই চলছে। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জুলাই–আগস্ট সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় কম। আগের বছর একই সময়ে এ হার ছিল ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। প্রশাসনিক জটিলতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ও অর্থ ছাড়ে বিলম্বের কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে বছরের শেষে ব্যাকলোডেড ব্যয়ের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

সার্বিকভাবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনীতিতে একদিকে যেমন মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক খাতে আশাব্যঞ্জক পরিবর্তন এসেছে, তেমনি ব্যাংক খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের নিম্নগতি ও উন্নয়ন ব্যয়ের ধীরগতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। সামষ্টিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে হলে মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির ভারসাম্য রক্ষা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির ওপর জোর দিতে হবে।