গাজামুখী ত্রাণবাহী নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নেতৃত্ব দেওয়া সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে ‘ঝামেলাবাজ’, পাগলাটে আর অতি রাগী মেয়ে আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একই সঙ্গে তাকে ডাক্তার দেখানো পরার্মশ দিয়েছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার গ্রেটা থুনবার্গ গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ৪০০ জনের বেশি অধিকারকর্মীকে আটক করে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। পরে অধিকারকর্মীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করে ইসরায়েল। সোমবার গ্রেটা থুনবার্গসহ ১৭১ অধিকারকর্মীকে গ্রিস ও স্লোভাকিয়ায় ফেরত পাঠায় ইসরায়েল। এ নিয়ে থুনবার্গকে দ্বিতীয়বার ইসরায়েল থেকে ফেরত পাঠানো হলো। এই পরপরই তাকে নিয়ে উপহাস করে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প।
সোমবার (৬ অক্টোবর) হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘সে (থুনবার্গ) একজন ঝামেলা সৃষ্টিকারী। তিনি এখন আর পরিবেশ নিয়ে নেই, এখন অন্য কিছুর মধ্যে ঢুকে পড়েছে। তার রাগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা আছে। আমার মনে হয় তার একজন ডাক্তার দেখানো উচিত…আপনি কি কখনও তাকে দেখেছেন? সে একজন তরুণী। সে খুব রাগান্বিত, সে খুব পাগলাটে… সে কেবল একজন ঝামেলা সৃষ্টিকারী।’
এদিকে ট্রাম্পের এমন তির্যক মন্তব্যের জবাবে মঙ্গলবার সকালে ইনস্টাগ্রামে এক পোস্টে গ্রেটা থুনবার্গ লেখেন, ‘শুনেছি ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও আমার চরিত্র নিয়ে তার প্রশংসনীয় মন্তব্য করেছেন। আমার মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি তার এই উদ্বেগ আমি প্রশংসা করি।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘এই তথাকথিত রাগ নিয়ন্ত্রণ সমস্যা মোকাবিলায় আপনার যদি কোনো পরামর্শ থাকে, আমি তা সানন্দে গ্রহণ করব— কারণ আপনার অতীত আচরণ দেখলে মনে হয়, আপনি নিজেও এই সমস্যায় ভুগছেন।
গ্রেটা থুনবার্গকে নিয়ে ট্রাম্পের বিরুপ মন্তব্য এটিই প্রথমবার নয়। এরআগে ২০১৯ সালে ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তি নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প থুনবার্গকে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, ‘তার রাগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা আছে’।
সেই সময়ও জবাবে থুনবার্গ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, ‘একজন কিশোরী, যে তার রাগ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।’
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর জলবায়ু আন্দোলনের নেত্রী গ্রেটা থুনবার্গের সঙ্গে ভয়ঙ্কর আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গাজামুখী ত্রাণবাহী ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’র সহযাত্রী আন্তর্জাতিক কর্মীরা। তারা জানান, আটকের পর গ্রেটাকে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়, এমনকি তাকে ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খেতে বাধ্য করা হয়।
তুরস্কে ফিরে আসা ফ্লোটিলা কর্মীদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন দেশের নাগরিক। তাদের মধ্যে তুর্কি সাংবাদিক এরসিন সেলিক বলেন, তিনি নিজ চোখে দেখেছেন গ্রেটাকে কীভাবে অপমান করা হয়েছে। তাকে টেনে নেওয়া হয় এবং জোর করে পতাকায় চুমু খাওয়ানো হয়।
তুরস্কে অবতরণ করা মালয়েশিয়ার নাগরিক হাজওয়ানি হেলমি ও মার্কিন নাগরিক উইন্ডফিল্ড বিভারও এমনই অভিজ্ঞতার কথা জানান। তারা বলেন, গ্রেটাকে ইচ্ছের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি পতাকা দিয়ে প্যারেড করানো হয়। হেলমি বলেন, আমাদের খাবার দেওয়া হয়নি, ওষুধও ছিল না। পরিষ্কার পানিও মেলেনি।
বিভার আরও বলেন, গ্রেটার সঙ্গে ভয়ংকর ব্যবহার করা হয়েছে, যেন তাকে একটি প্রতীক বানানো হয়। তিনি দাবি করেন, একজন ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রী ঘরে ঢুকলে গ্রেটাকে জোর করে ওই ঘরে ঠেলে নেওয়া হয়।
সূত্র: এনডিটিভি, আলজাজিরা