ঢাকা ০২:২১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সময় নষ্ট করলে গাজায় ভয়াবহ রক্তপাত ঘটবে : ট্রাম্প

গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে মধ্যস্থতাকারীদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার মিসরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, সময় এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। না হলে ভয়াবহ রক্তপাত ঘটবে।

খুব শিগগিরই জিম্মিদের মুক্তি শুরু হবে বলে আশা করছেন তিনি।

শান্তি পরিকল্পনায় নমনীয়তার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, নমনীয়তার প্রয়োজন নেই, কারণ প্রায় সবাই মূল পরিকল্পনায় একমত হয়েছে। অবশ্য কিছু পরিবর্তন সব সময়ই হতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটা ইসরায়েলের জন্য দারুণ চুক্তি, আবার আরব বিশ্ব, মুসলিম বিশ্ব ও পুরো বিশ্বের জন্যও বড় সুযোগ। আমরা এতে খুবই সন্তুষ্ট।

এদিকে প্রস্তাবিত মার্কিন শান্তি পরিকল্পনায় হামাসের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানানোর পরও গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার ট্রাম্প ইসরায়েলকে ‘অবিলম্বে বোমা বর্ষণ বন্ধের’ আহ্বান জানালেও রবিবার পর্যন্ত দখলদার দেশটির আক্রমণ চলেছে গাজায়।

ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদরোসিয়ান রবিবার জানান, গাজার কিছু এলাকায় বোমা হামলা বন্ধ হয়েছে, তবে এখনও কোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিরক্ষামূলক কারণে পাল্টা হামলা চালাতে- যদি গাজায় তাদের জীবনের হুমকি থাকে।

গাজা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান ও ট্যাংক হামলায় গাজা সিটির বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সিবিএস নিউজকে বলেন, জিম্মি মুক্তির পথ খুলতে বোমা হামলা বন্ধ করতে হবে।

মার্কিন প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতি ও ৪৮ জন জিম্মির মুক্তির কথা বলা হয়েছে- যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল শত শত গাজাবাসী বন্দিকে মুক্তি দিতে পারে।

শনিবার টেলিভিশন ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি আশা করছেন আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জিম্মি মুক্তির ঘোষণা দেওয়া যাবে।

ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল সোমবার মিসরে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় যোগ দেবে। হামাসের প্রতিনিধি দলও রবিবার রাতে দোহা থেকে কায়রো পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আলোচনায় যুক্ত থাকবেন মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি।

পর্যবেক্ষকদের মতে, যুদ্ধ শুরুর পর এটি হতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক- যা হয়তো যুদ্ধবিরতির পথে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

অনেক ফিলিস্তিনি বলছেন, হামাসের প্রতিক্রিয়া এবার অপ্রত্যাশিত ছিল। কয়েক দিন ধরেই ধারণা করা হচ্ছিল, তারা ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করবে বা কঠোর শর্ত দেবে।

বিশ্লেষকদের মতে, কাতার, মিসর ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় হামাস নরম অবস্থান নিয়েছে।

তবে অনেক গাজাবাসী সতর্ক করছেন, এই নমনীয়তা বিপজ্জনক হতে পারে- কারণ প্রতিটি বিলম্ব মানে আরও মৃত্যু ও ধ্বংস।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, হামাস যদি গাজার ক্ষমতায় থেকে যেতে চায়, তবে তারা ‘সম্পূর্ণ ধ্বংসের’ মুখে পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও জানান, ইসরায়েল গাজায় প্রাথমিক পর্যায়ের সেনা প্রত্যাহার মানচিত্রে সম্মতি দিয়েছে। তার প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৯ লাখ ফিলিস্তিনি নিজেদের ঘরে ফিরতে পারবেন না। মানচিত্রে রাফাহ, বেইত হনুন, বেইত লাহিয়া, গাজা সিটির একাংশ, খান ইউনুস ও দেইর আল-বালাহর অর্ধেক অংশ ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়। এরপর ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

সময় নষ্ট করলে গাজায় ভয়াবহ রক্তপাত ঘটবে : ট্রাম্প

আপডেট সময় : ০১:৪৩:৩৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে মধ্যস্থতাকারীদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার মিসরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে পরোক্ষ শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, সময় এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। না হলে ভয়াবহ রক্তপাত ঘটবে।

খুব শিগগিরই জিম্মিদের মুক্তি শুরু হবে বলে আশা করছেন তিনি।

শান্তি পরিকল্পনায় নমনীয়তার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, নমনীয়তার প্রয়োজন নেই, কারণ প্রায় সবাই মূল পরিকল্পনায় একমত হয়েছে। অবশ্য কিছু পরিবর্তন সব সময়ই হতে পারে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এটা ইসরায়েলের জন্য দারুণ চুক্তি, আবার আরব বিশ্ব, মুসলিম বিশ্ব ও পুরো বিশ্বের জন্যও বড় সুযোগ। আমরা এতে খুবই সন্তুষ্ট।

এদিকে প্রস্তাবিত মার্কিন শান্তি পরিকল্পনায় হামাসের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানানোর পরও গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার ট্রাম্প ইসরায়েলকে ‘অবিলম্বে বোমা বর্ষণ বন্ধের’ আহ্বান জানালেও রবিবার পর্যন্ত দখলদার দেশটির আক্রমণ চলেছে গাজায়।

ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদরোসিয়ান রবিবার জানান, গাজার কিছু এলাকায় বোমা হামলা বন্ধ হয়েছে, তবে এখনও কোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়নি।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেনাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিরক্ষামূলক কারণে পাল্টা হামলা চালাতে- যদি গাজায় তাদের জীবনের হুমকি থাকে।

গাজা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি বিমান ও ট্যাংক হামলায় গাজা সিটির বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবন ধ্বংস হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সিবিএস নিউজকে বলেন, জিম্মি মুক্তির পথ খুলতে বোমা হামলা বন্ধ করতে হবে।

মার্কিন প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতি ও ৪৮ জন জিম্মির মুক্তির কথা বলা হয়েছে- যাদের মধ্যে ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল শত শত গাজাবাসী বন্দিকে মুক্তি দিতে পারে।

শনিবার টেলিভিশন ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, তিনি আশা করছেন আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই জিম্মি মুক্তির ঘোষণা দেওয়া যাবে।

ইসরায়েলি প্রতিনিধি দল সোমবার মিসরে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় যোগ দেবে। হামাসের প্রতিনিধি দলও রবিবার রাতে দোহা থেকে কায়রো পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আলোচনায় যুক্ত থাকবেন মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার ও কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান আল থানি।

পর্যবেক্ষকদের মতে, যুদ্ধ শুরুর পর এটি হতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক- যা হয়তো যুদ্ধবিরতির পথে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।

অনেক ফিলিস্তিনি বলছেন, হামাসের প্রতিক্রিয়া এবার অপ্রত্যাশিত ছিল। কয়েক দিন ধরেই ধারণা করা হচ্ছিল, তারা ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করবে বা কঠোর শর্ত দেবে।

বিশ্লেষকদের মতে, কাতার, মিসর ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় হামাস নরম অবস্থান নিয়েছে।

তবে অনেক গাজাবাসী সতর্ক করছেন, এই নমনীয়তা বিপজ্জনক হতে পারে- কারণ প্রতিটি বিলম্ব মানে আরও মৃত্যু ও ধ্বংস।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, হামাস যদি গাজার ক্ষমতায় থেকে যেতে চায়, তবে তারা ‘সম্পূর্ণ ধ্বংসের’ মুখে পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আরও জানান, ইসরায়েল গাজায় প্রাথমিক পর্যায়ের সেনা প্রত্যাহার মানচিত্রে সম্মতি দিয়েছে। তার প্রকাশিত মানচিত্র অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৯ লাখ ফিলিস্তিনি নিজেদের ঘরে ফিরতে পারবেন না। মানচিত্রে রাফাহ, বেইত হনুন, বেইত লাহিয়া, গাজা সিটির একাংশ, খান ইউনুস ও দেইর আল-বালাহর অর্ধেক অংশ ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়। এরপর ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজার ১৩৯ জন নিহত হয়েছেন।