২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত সহিংসতায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় আজ সোমবার (৬ অক্টোবর) মামলার সর্বশেষ সাক্ষীকে জেরা করবেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। সাক্ষী মো. আলমগীর মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা।
এই জেরা অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত বিচারিক প্যানেলে শুনানি চলবে।
মামলার অংশ হিসেবে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর। এটি ছিল তার সাক্ষ্যের তৃতীয় দিন। তার সাক্ষ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের সময় দেশজুড়ে ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে সহিংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় এবং ৫০টিরও বেশি জেলায় ব্যবহৃত হয় মারণাস্ত্র। এ নিয়ে আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে ভিডিও, দালিলিক প্রমাণসহ অন্যান্য উপাত্ত।
তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, এসব সহিংসতা পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয় এবং এতে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামলায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হন।
আলমগীরের সাক্ষ্যে উল্লেখ করা হয়, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সংগ্রহ করা ১৭টি ভিডিও ফুটেজ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে, যাতে ঘটনাগুলোর ভয়াবহতা ও সংঘটনের ধরন উঠে আসে। এ মামলায় মোট ২৫ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আলমগীর এই মামলার শেষ সাক্ষী।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজকের দিনে তার জেরা হওয়ার কথা রয়েছে। এর পরপরই মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে যাবে। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিয়েছেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ আরও অনেকে।
এ মামলার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যগ্রহণ হয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর, যেখানে বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্য দেন এবং তাকেও পরে জেরা করেন শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন।
এ মামলায় ২০২৫ সালের ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। মামলায় মোট পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রসিকিউশনের অভিযোগপত্রের দৈর্ঘ্য ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠা। এর মধ্যে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র, ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা দালিলিক প্রমাণ ও জব্দতালিকা এবং ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায় শহীদদের তালিকা ও তাদের পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে।
সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
মামলায় সাক্ষীদের জবানবন্দিতে যে বিবরণ উঠে এসেছে, তা অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই-আগস্টে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংগঠিত সহিংসতায় অনেক প্রাণহানি ঘটে। শহীদ পরিবারের সদস্যরা এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা আদালতের কাছে এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।