হামাস জানিয়েছে, তারা গাজায় ইসরায়েলের প্রায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে বিরতির জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের কিছু অংশ গ্রহণে প্রস্তুত। তবে কিছু বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা জানায়, শুক্রবার ট্রাম্পের ২০ দফা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনার প্রতি হামাস তাদের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া হস্তান্তর করেছে। এর কয়েক ঘণ্টা আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই প্রস্তাবনায় সাড়া দেওয়ার জন্য রোববার পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন।
ট্রাম্পের প্রস্তাবে তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি, গাজায় থাকা ৪৮ জন ইসরায়েলি বন্দির (যাদের মধ্যে প্রায় ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে) বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা-নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা এবং হামাসকে নিরস্ত্র করার দাবি রাখা হয়েছে।
হামাসের দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে তারা জানিয়েছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবনায় নির্ধারিত বিনিময় পদ্ধতি অনুযায়ী “সমস্ত দখলদার বন্দি – জীবিত এবং মৃতদেহ – মুক্তি দিতে সম্মত”, তবে এজন্য প্রয়োজনীয় মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
তারা আরও জানিয়েছে, এই বিনিময় প্রক্রিয়ার বিস্তারিত আলোচনার জন্য তারা “দলীয় মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে আলোচনায় প্রবেশ করতে প্রস্তুত”।
হামাস এও জানিয়েছে, তারা “গাজা স্ট্রিপের প্রশাসন একটি স্বাধীন (প্রযুক্তিবিদ বা টেকনোক্র্যাট) ফিলিস্তিনি সংস্থার হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত, যা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এবং আরব ও ইসলামী সমর্থনে পরিচালিত হবে।”
এই বক্তব্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত “বোর্ড অফ পিস”-এর অধীনে আন্তর্জাতিক শাসনের পরিবর্তে হামাস চায় গাজা যেন ফিলিস্তিনিদের দ্বারা শাসিত হয়।
তারা আরও বলেছে, প্রস্তাবে গাজার ভবিষ্যৎ ও ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার নিয়ে যেসব বিষয় রয়েছে, তা “জাতীয় ঐকমত্য এবং আন্তর্জাতিক আইন ও প্রস্তাবনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হওয়া উচিত।”
এই বিবৃতি আসে ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত এক হুমকির পরে, যেখানে তিনি বলেন, যদি রোববারের মধ্যে কোনো চুক্তি না হয়, তাহলে “হামাসের বিরুদ্ধে এমন নরক নামবে, যা আগে কেউ দেখেনি।”
পরে শুক্রবার, ট্রাম্প হামাসের বিবৃতিতে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান এবং লেখেন, তিনি মনে করেন হামাস “স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত।” একই সঙ্গে তিনি ইসরায়েলকে আহ্বান জানান “তাৎক্ষণিকভাবে গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করতে, যাতে আমরা নিরাপদে ও দ্রুতভাবে জিম্মিদের উদ্ধার করতে পারি।”
“এটি শুধু গাজার বিষয় নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যে বহু আকাঙ্ক্ষিত শান্তির বিষয়,” বলেন প্রেসিডেন্ট।
আলোচনার দরজা খুলছে?
আল জাজিরার সাংবাদিক আলি হাসেম বলেন, হামাসের বিবৃতি আলোচনার একটি জানালা খুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, “আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অনেক কিছু বদলে যেতে পারে।”
হাসেম বলেন, ট্রাম্প প্রস্তাবিত “বোর্ড অফ পিস” নিয়ে হামাসের আপত্তির কারণ হলো এটি “গাজাকে বৃহত্তর ফিলিস্তিনি ইস্যু থেকে বিচ্ছিন্ন করে।” তিনি বলেন, “হামাস চায় না গাজা বৃহৎ ফিলিস্তিনি প্রেক্ষাপট থেকে আলাদা হোক।”
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের প্রস্তাবে ভবিষ্যতে ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরের সঙ্গে গাজার পুনরেকত্রীকরণের কোনো পথ রাখা হয়নি।
হামাস আরও জানিয়েছে, তারা “আরব, ইসলামী ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাসহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে” স্বাগত জানায়।
আলি হাসেম বলেন, “হামাস ইতিবাচকতা দেখিয়েছে এই বলে যে তারা প্রস্তাবটির মূল চেতনা গ্রহণ করেছে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। এতে তারা দেখিয়েছে তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত।”
“তবে তাদের কিছু আপত্তি ও স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন, এখন বলটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কোর্টে।”
সূত্র: আল জাজিরা।