ঢাকা ০২:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বামী ও বাবা হারানো লামিস দিবের যুদ্ধের আগের শেষ দিনটি ছিল সুন্দর: দুই বছরের যুদ্ধে গাজার এক মায়ের বেঁচে থাকার সংগ্রাম

  • চেতনায়২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৯:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫
  • ২২২ বার পড়া হয়েছে

দুই বছরের অবিরাম যুদ্ধে একাধিকবার বাস্তুচ্যুতি হতে হয়েছে। একে একে হারিয়েছেন পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন স্বামী ও বাবাকে। বাস্তুচ্যুতি ও প্রিয়জনদের মৃত্যু গাজার লামিস দিবের জীবনকে কেবল বেঁচে থাকার এক নিরলস সংগ্রামে পরিণত করেছে।

৩১ বছর বয়সী দুই সন্তানের এই মা ফিলিস্তিনি অঞ্চলকে ধ্বংস করে চলা এই যুদ্ধ সম্পর্কে বলেন, “এটি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।”

তিনি স্মরণ করেন, ২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর, শুক্রবার, যুদ্ধের আগের শেষ দিনটি ছিল একটি সুন্দর দিন।

তাঁর বড় মেয়ে সুওয়ারের তখন বয়স ছিল পাঁচ বছর।‌ সে সবে কিন্ডারগার্টেন শুরু করেছিল। দিব রোজ বিকেলে গাজা শহরের উত্তরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত এলাকা শেখ রাদওয়ানে তাঁদের অ্যাপার্টমেন্টের জানালা থেকে মেয়েকে বাড়ি ফিরতে দেখতেন।

তাঁর ছেলে আমিনের বয়স ছিল তখন তিন বছর। দিব জানান, সে তার পুরোটা সময় নিত। প্রায়ই তাকে নিকটস্থ সমুদ্রের ধারে নিয়ে যেতেন।
দিব সমাজকর্মী হওয়ার জন্য পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু গাজার যুদ্ধ-পূর্ববর্তী দারিদ্র্যপীড়িত অর্থনীতিতে চাকরি পাননি। ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে উপত্যকার অর্থনীতি আংশিকভাবে স্থবির হয়ে পড়ে।

তবে দিব তাঁর স্বামীর সাথে একটি সুখী পরিবার গড়ে তুলেছিলেন। তার স্বামী ছিলেন একজন হিসাবরক্ষক। তিনি তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, “তাঁর কখনোই কোনো কিছুর অভাবে পড়তে হবে না।”

তাঁদের পাড়াটি ছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি হামলার শিকার হওয়া প্রথম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি।

জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য মনে করে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন তথ্য অনুসারে, এরপর থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় অন্তত ৬৬,২২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, পুরো পাড়াগুলো মাটির সাথে মিশে গেছে এবং লক্ষ লক্ষ টন ধ্বংসস্তূপ এখন সেই এলাকাগুলিকে ঢেকে রেখেছে যেখানে একসময় পরিবারগুলো বাস করত।

ভবন, হাসপাতাল, স্কুল, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে এবং এই অঞ্চলের বিশ লাখের বেশি মানুষকে মারাত্মক অমানবিক পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।

লাখ লাখ গৃহহীন গাজাবাসী আশ্রয়কেন্দ্র, অস্থায়ী শিবির এবং খোলা জায়গায় গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়েছে। প্রাথমিক সুরক্ষারও অভাবে পড়তে হয়েছে তাদের।

‘মৃত্যুর বিরুদ্ধে দৌড়’

দিবের এলাকায় হামলা হলে তিনি ও তাঁর পরিবার কাছেই একটি জেলায় পালিয়ে যান — যা ছিল বাস্তুচ্যুতির প্রথম ধাপ। এরপর তাঁরা উত্তর গাজা ছেড়ে দক্ষিণে খান ইউনিস শহরে চলে যান।

“আমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোর মধ্যে এটি ছিল একটি,” ছিন্নভিন্ন রাস্তা এবং সামরিক চেকপয়েন্টের মধ্য দিয়ে তাঁদের দীর্ঘ পথ চলার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন দিব।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলার সময় তাঁকে ও তাঁর সন্তানদের ১১ বার বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল বিমান হামলার মধ্যে মৃত্যুর বিরুদ্ধে দৌড়। মনে হচ্ছিল আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলছি, আমি আমার সন্তানদের বহন করছিলাম, তাদের আমার সাথে চেপে ধরে রেখেছিলাম এবং পিছনে না তাকিয়েই দৌড়াচ্ছিলাম, কোথায় যাচ্ছি তা না জেনেই।”

পরিবারটি যখন কিছু সময়ের জন্য দক্ষিণের শহর রাফাতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন অভাব ও অতিরিক্ত গাদাগাদি করে বাস করা ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।

তিনি বলেন, “রাফাতে ছয় মাস আমরা ৩০ জন একটি মাত্র ঘরে ঘুমাতাম। সেখানে কোনো শৌচাগার ছিল না। আমরা যা অনুভব করছিলাম তা প্রকাশ করা কঠিন ছিল: আবদ্ধতা, অবিরাম বিমান হামলা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, স্বাস্থ্যবিধির অভাব এবং গোপনীয়তার পুরোপুরি অনুপস্থিতি।”

২০২৪ সালের আগস্ট মাসে পরিবারটি মধ্য গাজার শরণার্থী শিবির নুসিরাতে বসবাস করে। এসময় দিবের জীবন আবার বদলে যায়।

তিনি বলেন, “এক শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায়, আমার স্বামী এবং আমার বাবা পরিবারের পাঁচজন যুবকের সাথে ছাদে ছিলেন। এসময় আমরা একটি ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দ শুনলাম এবং ধোঁয়া দেখতে পেলাম।”

“আমি ছাদের দিকে দৌড়ালাম এবং দৃশ্যটি ছিল অকল্পনীয়; তারা সবাই মারা গিয়েছিল।”

“আমার স্বামীর শরীর অক্ষত লাগছিল, আমি ভেবেছিলাম তিনি বেঁচে আছেন। আমি তাকে জাগানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছিল। এবং তারপরে আমি আমার বাবার মৃতদেহ পেলাম…তাঁর হাত উড়ে গিয়েছিল।”

একটুখানি শান্তির খোঁজে

গাজায় জীবন যখন সবচেয়ে কঠিন হয়ে উঠেছিল ঠিক তখন থেকেই দিবকে তাঁর সন্তানদের একা দেখাশোনা করতে হয়েছে।

তিনি আল-জাওয়াইদাতে একটি তাঁবুতে চলে যান। এটা এমন একটি শিবিরে যেখানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি একই রকম কঠিন দৈনন্দিন জীবন ভাগ করে নেয়। তারা ত্রিপলের নীচে বাস করেন যা বাতাসে ঝাপটায়, গ্রীষ্মের তাপে সেদ্ধ হয় এবং শীতের বৃষ্টিতে ফুটো হয়ে ভিতরে পানি পড়ে। তিনি তাঁর আশ্রয়স্থলের ভেতর থেকে বলেন, “সবকিছুই কঠিন।”

যদিও তাঁর বন্ধুরা সাহায্যের জন্য তাদের বাবা বা স্বামীদের কাছে আবেদন জানাতে পারে। কিন্তু দিবকে একাই অন্তহীন আর্থিক সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়।

২০২৫ সালের মে মাসে, ইসরায়েল মার্চ মাসে আরোপিত সরবরাহের উপর সম্পূর্ণ অবরোধ শিথিল করে। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, এরপর থেকে যে মানবিক সহায়তা সামান্য পরিমাণে আসছে তা যথেষ্ট নয়।

তিনি বলেন, “আমাদের শিশুদের কাছ থেকে শিক্ষা, খাদ্য এবং একটি স্বাভাবিক জীবন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।” এসময় সুওয়ার এবং আমিন তাঁর কোলে পড়াশোনা করছিল।

মাঝে মাঝে, তারা দিবের ফোনে যুদ্ধের সময় নিহত তাদের বাবা এবং আত্মীয়দের ছবি দেখে।

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে যাব। আমরা এটি পুনর্নির্মাণ করব। আমরা শুধুই একটু শান্তি চাই।”

তাদের মায়ের মতো, সুওয়ার এবং আমিনও মূলত বেঁচে থাকার চিন্তায় ব্যস্ত‌। তাঁবুর কাছে একটি অস্থায়ী পানি স্টেশন থেকে পরিবারের জারিক্যানগুলিতে (পানির পাত্র) পানি ভরে আনার দায়িত্ব তাদের উপর।

তাদের জন্য যুদ্ধের পরিণতি বিমান হামলার পরেও স্থায়ী হতে পারে।

জাতিসংঘের শিশুদের সংস্থা ইউনিসেফ ২০২৪ সালে অনুমান করেছিল, গাজার প্রতিটি শিশুর মনস্তাত্ত্বিক সহায়তার প্রয়োজন।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

স্বামী ও বাবা হারানো লামিস দিবের যুদ্ধের আগের শেষ দিনটি ছিল সুন্দর: দুই বছরের যুদ্ধে গাজার এক মায়ের বেঁচে থাকার সংগ্রাম

আপডেট সময় : ০৮:৩৯:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

দুই বছরের অবিরাম যুদ্ধে একাধিকবার বাস্তুচ্যুতি হতে হয়েছে। একে একে হারিয়েছেন পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন স্বামী ও বাবাকে। বাস্তুচ্যুতি ও প্রিয়জনদের মৃত্যু গাজার লামিস দিবের জীবনকে কেবল বেঁচে থাকার এক নিরলস সংগ্রামে পরিণত করেছে।

৩১ বছর বয়সী দুই সন্তানের এই মা ফিলিস্তিনি অঞ্চলকে ধ্বংস করে চলা এই যুদ্ধ সম্পর্কে বলেন, “এটি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।”

তিনি স্মরণ করেন, ২০২৩ সালের ৬ অক্টোবর, শুক্রবার, যুদ্ধের আগের শেষ দিনটি ছিল একটি সুন্দর দিন।

তাঁর বড় মেয়ে সুওয়ারের তখন বয়স ছিল পাঁচ বছর।‌ সে সবে কিন্ডারগার্টেন শুরু করেছিল। দিব রোজ বিকেলে গাজা শহরের উত্তরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত এলাকা শেখ রাদওয়ানে তাঁদের অ্যাপার্টমেন্টের জানালা থেকে মেয়েকে বাড়ি ফিরতে দেখতেন।

তাঁর ছেলে আমিনের বয়স ছিল তখন তিন বছর। দিব জানান, সে তার পুরোটা সময় নিত। প্রায়ই তাকে নিকটস্থ সমুদ্রের ধারে নিয়ে যেতেন।
দিব সমাজকর্মী হওয়ার জন্য পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু গাজার যুদ্ধ-পূর্ববর্তী দারিদ্র্যপীড়িত অর্থনীতিতে চাকরি পাননি। ২০০৭ সাল থেকে ইসরায়েলের কঠোর অবরোধের কারণে উপত্যকার অর্থনীতি আংশিকভাবে স্থবির হয়ে পড়ে।

তবে দিব তাঁর স্বামীর সাথে একটি সুখী পরিবার গড়ে তুলেছিলেন। তার স্বামী ছিলেন একজন হিসাবরক্ষক। তিনি তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, “তাঁর কখনোই কোনো কিছুর অভাবে পড়তে হবে না।”

তাঁদের পাড়াটি ছিল ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি হামলার শিকার হওয়া প্রথম এলাকাগুলোর মধ্যে একটি।

জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য মনে করে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন তথ্য অনুসারে, এরপর থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় অন্তত ৬৬,২২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।

গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, পুরো পাড়াগুলো মাটির সাথে মিশে গেছে এবং লক্ষ লক্ষ টন ধ্বংসস্তূপ এখন সেই এলাকাগুলিকে ঢেকে রেখেছে যেখানে একসময় পরিবারগুলো বাস করত।

ভবন, হাসপাতাল, স্কুল, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে এবং এই অঞ্চলের বিশ লাখের বেশি মানুষকে মারাত্মক অমানবিক পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে।

লাখ লাখ গৃহহীন গাজাবাসী আশ্রয়কেন্দ্র, অস্থায়ী শিবির এবং খোলা জায়গায় গাদাগাদি করে আশ্রয় নিয়েছে। প্রাথমিক সুরক্ষারও অভাবে পড়তে হয়েছে তাদের।

‘মৃত্যুর বিরুদ্ধে দৌড়’

দিবের এলাকায় হামলা হলে তিনি ও তাঁর পরিবার কাছেই একটি জেলায় পালিয়ে যান — যা ছিল বাস্তুচ্যুতির প্রথম ধাপ। এরপর তাঁরা উত্তর গাজা ছেড়ে দক্ষিণে খান ইউনিস শহরে চলে যান।

“আমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোর মধ্যে এটি ছিল একটি,” ছিন্নভিন্ন রাস্তা এবং সামরিক চেকপয়েন্টের মধ্য দিয়ে তাঁদের দীর্ঘ পথ চলার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন দিব।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলার সময় তাঁকে ও তাঁর সন্তানদের ১১ বার বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে। তিনি বলেন, “প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল বিমান হামলার মধ্যে মৃত্যুর বিরুদ্ধে দৌড়। মনে হচ্ছিল আমি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলছি, আমি আমার সন্তানদের বহন করছিলাম, তাদের আমার সাথে চেপে ধরে রেখেছিলাম এবং পিছনে না তাকিয়েই দৌড়াচ্ছিলাম, কোথায় যাচ্ছি তা না জেনেই।”

পরিবারটি যখন কিছু সময়ের জন্য দক্ষিণের শহর রাফাতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তখন অভাব ও অতিরিক্ত গাদাগাদি করে বাস করা ছিল স্বাভাবিক ঘটনা।

তিনি বলেন, “রাফাতে ছয় মাস আমরা ৩০ জন একটি মাত্র ঘরে ঘুমাতাম। সেখানে কোনো শৌচাগার ছিল না। আমরা যা অনুভব করছিলাম তা প্রকাশ করা কঠিন ছিল: আবদ্ধতা, অবিরাম বিমান হামলা, ক্ষুধা, তৃষ্ণা, স্বাস্থ্যবিধির অভাব এবং গোপনীয়তার পুরোপুরি অনুপস্থিতি।”

২০২৪ সালের আগস্ট মাসে পরিবারটি মধ্য গাজার শরণার্থী শিবির নুসিরাতে বসবাস করে। এসময় দিবের জীবন আবার বদলে যায়।

তিনি বলেন, “এক শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায়, আমার স্বামী এবং আমার বাবা পরিবারের পাঁচজন যুবকের সাথে ছাদে ছিলেন। এসময় আমরা একটি ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দ শুনলাম এবং ধোঁয়া দেখতে পেলাম।”

“আমি ছাদের দিকে দৌড়ালাম এবং দৃশ্যটি ছিল অকল্পনীয়; তারা সবাই মারা গিয়েছিল।”

“আমার স্বামীর শরীর অক্ষত লাগছিল, আমি ভেবেছিলাম তিনি বেঁচে আছেন। আমি তাকে জাগানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছিল। এবং তারপরে আমি আমার বাবার মৃতদেহ পেলাম…তাঁর হাত উড়ে গিয়েছিল।”

একটুখানি শান্তির খোঁজে

গাজায় জীবন যখন সবচেয়ে কঠিন হয়ে উঠেছিল ঠিক তখন থেকেই দিবকে তাঁর সন্তানদের একা দেখাশোনা করতে হয়েছে।

তিনি আল-জাওয়াইদাতে একটি তাঁবুতে চলে যান। এটা এমন একটি শিবিরে যেখানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি একই রকম কঠিন দৈনন্দিন জীবন ভাগ করে নেয়। তারা ত্রিপলের নীচে বাস করেন যা বাতাসে ঝাপটায়, গ্রীষ্মের তাপে সেদ্ধ হয় এবং শীতের বৃষ্টিতে ফুটো হয়ে ভিতরে পানি পড়ে। তিনি তাঁর আশ্রয়স্থলের ভেতর থেকে বলেন, “সবকিছুই কঠিন।”

যদিও তাঁর বন্ধুরা সাহায্যের জন্য তাদের বাবা বা স্বামীদের কাছে আবেদন জানাতে পারে। কিন্তু দিবকে একাই অন্তহীন আর্থিক সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়।

২০২৫ সালের মে মাসে, ইসরায়েল মার্চ মাসে আরোপিত সরবরাহের উপর সম্পূর্ণ অবরোধ শিথিল করে। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, এরপর থেকে যে মানবিক সহায়তা সামান্য পরিমাণে আসছে তা যথেষ্ট নয়।

তিনি বলেন, “আমাদের শিশুদের কাছ থেকে শিক্ষা, খাদ্য এবং একটি স্বাভাবিক জীবন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।” এসময় সুওয়ার এবং আমিন তাঁর কোলে পড়াশোনা করছিল।

মাঝে মাঝে, তারা দিবের ফোনে যুদ্ধের সময় নিহত তাদের বাবা এবং আত্মীয়দের ছবি দেখে।

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের বাড়িতে ফিরে যাব। আমরা এটি পুনর্নির্মাণ করব। আমরা শুধুই একটু শান্তি চাই।”

তাদের মায়ের মতো, সুওয়ার এবং আমিনও মূলত বেঁচে থাকার চিন্তায় ব্যস্ত‌। তাঁবুর কাছে একটি অস্থায়ী পানি স্টেশন থেকে পরিবারের জারিক্যানগুলিতে (পানির পাত্র) পানি ভরে আনার দায়িত্ব তাদের উপর।

তাদের জন্য যুদ্ধের পরিণতি বিমান হামলার পরেও স্থায়ী হতে পারে।

জাতিসংঘের শিশুদের সংস্থা ইউনিসেফ ২০২৪ সালে অনুমান করেছিল, গাজার প্রতিটি শিশুর মনস্তাত্ত্বিক সহায়তার প্রয়োজন।