ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেছেন, এটা স্পষ্ট যে ব্যালট পেপার ছাপানোর স্থান বা সংখ্যা সুষ্ঠু নির্বাচনকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করে না। কারণ ব্যালট পেপারকে ভোটের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করতে একাধিক ধাপ সম্পন্ন করতে হয়।
তিনি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে যে অভিযোগ পেয়েছি, প্রত্যেকটির জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। ৪৮টি অভিযোগের কমনগুলো জবাব দিয়েছি। ১৬টি অভিযোগ ৬৯ ধারায় ব্যক্তি পর্যায়ে অফিসিয়াল চিঠির মাধ্যমে নিশ্চিত করেছি। এরপরও আমরা লক্ষ্য করেছি, নির্বাচনকে পদ্ধতিগত নানারকম প্রশ্ন তুলে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রবণতা চলছে। বিশেষ করে সর্বশেষ কয়েক সপ্তাহ পরে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টা চলছে।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে ঢাবি উপাচার্য বলেন, প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে নিয়ম মেনে একটি অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে ব্যালট পেপার ছাপানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভোটার ও প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় দ্রুততম সময়ে নির্ধারিত পরিমাণ ব্যালট ছাপানোর স্বার্থে মূল ভেন্ডরের সঙ্গে আলোচনা করে একই টেন্ডারের অধীনে আরেকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে নীলক্ষেতে ব্যালট ছাপানোর বিষয়টি সহযোগী ভেন্ডর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেনি।
সহযোগী ভেন্ডরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, নীলক্ষেতে ২২ রিম কাগজ ব্যবহার করে ৮৮ হাজার ব্যালট ছাপানো হয়। প্রিন্টিং, কাটিং, প্রি-স্ক্যান প্রক্রিয়া শেষে সেগুলোর মধ্যে ৮৬ হাজার ২৪৩টি ব্যালট প্যাকেটে ভরে সিলগালা করে সরবরাহযোগ্য হয়। অবশিষ্ট ব্যালট প্রচলিত নিয়মে ধ্বংস করা হয়। ভেন্ডর জানায়, কাটিং শেষে ব্যালটগুলো তাদের মূল অফিসে নিয়ে গিয়ে প্রি-স্ক্যান ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পন্ন করে নির্ধারিত পরিমাণে প্যাকেটে ভরে সিলগালা করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সরবরাহ করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী তারা পুরো প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। তবে ব্যস্ততার কারণে নীলক্ষেতে ছাপানোর বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাতে ভুল হয়েছে বলে তারা স্বীকার করে।
উপাচার্য আরও বলেন, ব্যালট পেপার শুধু ছাপালেই তা ভোটের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয় না। ছাপানোর পর নির্দিষ্ট মাপে কাটিং, নিরাপত্তা কোড আরোপ, ওএমআর মেশিনে প্রি-স্ক্যান, চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার সিল ও স্বাক্ষর এবং সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর—এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরই তা ভোট গ্রহণের উপযোগী হয়। এসব ধাপ নিশ্চিত করেই সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি জানান, কার্যাদেশ অনুযায়ী ২ লাখ ৩৯ হাজার ২৪৪টি ব্যালট ভোটের জন্য প্রস্তুত করা হয়। মোট ভোটার ছিলেন ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন; প্রত্যেকে ৬টি ব্যালট পান। ভোট দেন ২৯ হাজার ৮২১ জন ভোটার। ব্যবহার করা হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯২৬টি ব্যালট। অবশিষ্ট থাকে ৬০ হাজার ৩১৮টি ব্যালট।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিসিটিভি ফুটেজ এবং ভোটার তালিকা নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, কোনো প্রার্থী যদি সুনির্দিষ্ট সময় বা ঘটনার ফুটেজ দেখতে চান, তাহলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত স্থানে বিশেষজ্ঞ বা মনোনীত ব্যক্তির উপস্থিতিতে তা দেখা যাবে।
ভোটারদের স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা বিষয়ে উপাচার্য বলেন, কোনো প্রার্থী নির্দিষ্ট ও যৌক্তিক কারণে কোনো ভোটারের স্বাক্ষর পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ মনোনীত বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে তা দেখা সম্ভব।