গত বছরের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত সহিংসতায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আজ সাক্ষ্য দেবেন মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। তিনি এই মামলার ৫৪তম এবং শেষ সাক্ষী।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এই সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়েই শেষ হবে মামলার সাক্ষ্যপর্ব। এরপর শুরু হবে যুক্তিতর্ক।
এ মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তাদের সহযোগী মামুনকে। গত ১০ জুলাই এই তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে সারাদেশে চলা আন্দোলনের সময় হত্যাকাণ্ড, গণহত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার মতো ঘটনা ঘটে। এসব অপরাধের পেছনে মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুন।
মামলাটি তদন্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তারা এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় চলতি বছরের ১২ মে। প্রসিকিউশন মামলার যে অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করেছে, তা মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র রয়েছে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠায়, জব্দতালিকা ও প্রমাণাদি ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ রয়েছে ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায়।
মোট ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৩ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজকের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সাক্ষ্যগ্রহণের পুরো ধাপ।
এর আগে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর মামলার ২২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন সাক্ষ্য দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহা। তিনি তার তদন্তে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু তথ্য উপস্থাপন করেন। এর মধ্যে ছিল শেখ হাসিনার ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং তিনটি মোবাইল নম্বরের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর)। এসব প্রমাণ সংবলিত তিনটি সিডি তিনি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন।
সেদিন আদালতে কয়েকটি অডিও ক্লিপ বাজানো হয়। জোহার সাক্ষ্য শেষে তাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
মামলার আগের পর্যায়ে আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী আদালতে উপস্থিত হয়ে শহীদদের পরিবারের সদস্য হিসেবে তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ২২ সেপ্টেম্বর শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তী আদালতে সাক্ষ্য দেন। এর মধ্য দিয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য পর্ব শেষ করে প্রসিকিউশন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, কীভাবে গত বছরের আন্দোলনের সময় দেশে পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। তারা আদালতে দাবি করেন, এসব ঘটনার জন্য সরাসরি দায়ী শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান কামাল ও মামুন। শহীদ পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এদিকে আজকের সাক্ষ্যগ্রহণের সময় গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য ও ভিডিও আদালতে উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। মামলার প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম জানান, প্রধান তদন্ত কর্মকর্তার জবানবন্দির কিছু অংশ এবং কিছু ভিডিও প্রমাণ সরাসরি সম্প্রচার করা হতে পারে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে তা সম্প্রচার শুরু হতে পারে বলেও জানান তিনি।