ঢাকা ০২:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হাসিনা-ইনুর অডিও! ‘রামপুরা ক্লিয়ার, শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখনো আছে’

  • চেতনায়২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৯:১৮:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২৩৯ বার পড়া হয়েছে

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর বোম্বিং করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আন্দোলনে দমনে ছত্রীসেনাও মোতায়েন করতে চেয়েছিলেন তিনি।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১-এ শেখ হাসিনা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও শোনানো হয়।

ফোনালাপের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘রামপুরা ক্লিয়ার, শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখনো আছে।’

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা।

তিনি এই মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর। তার উপস্থাপন করা অডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ছত্রীসেনা মোতায়েন করতে চেয়েছিলেন তৎকালীন শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেছিলেন, হেলিকপ্টার দিয়ে সেখানে বোম্বিং করা হবে।

শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও আন্দোলন দমনে বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছিলেন! এর আগে এই টেলিফোন আলাপেই শেখ হাসিনা লিথাল উইপন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে প্রকাশ পায়। আজও সেই অডিওতে তা শোনা গেছে।

জবানবন্দির শেষ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালকে পাঁচটি অডিও দেন তানভীর হাসান। এর মধ্যে চারটি অডিও প্লে (চালানো) করা হয় আদালতে। যার মধ্যে দুটি অডিও শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনের। ট্রাইব্যুনালের আজকের এই কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনের একটি অডিও অনুযায়ী,

হাসানুল হক ইনু: আমি মনে করি যে আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে। এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট বাংলাদেশে পাচ্ছি আর কি। খালি ঢাকাতে আপনার রামপুরার দিকে এবং শনির আখড়াতে…।

শেখ হাসিনা: না, রামপুরা ক্লিয়ার। শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখনো আছে।

ইনু: শনির আখড়ায় কিছু মোল্লারাই…।

শেখ হাসিনা: খালি মোল্লা না, সেখানে অনেক মাদরাসা। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাইকিং করতে বলেছি। নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দিচ্ছে না আর্মিকে। আমরা ছত্রীসেনা নামাচ্ছি।

ইনু: ওহ, আচ্ছা।

শেখ হাসিনা: আমি বলছি, ক্যাজুয়ালটির দরকার নাই। ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো, ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে। কারণ, দুই পাশ দিয়ে ধরবে… মেসেজটা দিয়ে দিতে পারেন।

ইনু: আচ্ছা।

শেখ হাসিনা: ছত্রীসেনা পাঠানো হচ্ছে। ঠিক আছে, হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে। হেলিকপ্টার যাক, ওপর দিয়ে মারবে।

ইনু: আচ্ছা, ওপর দিয়ে সাউন্ড বোম যাবে আর কি।

হাসিনা: হুম।

জবানবন্দিতে তানভীর হাসান বলেন, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার ফোনালাপের ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং তিনটি মুঠোফোন নম্বরের সিডিআর এনটিএমসি থেকে জব্দ করা হয়। ছাত্র আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা লেথাল উইপন ব্যবহার করে সরাসরি গুলির নির্দেশে দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয় করে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বোম্বিং করার কথা বলেছিলেন এবং পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তদন্ত সংস্থার উপ-পরিচালক মো. জানে আলম খান। পরে তদন্ত করেন উপ-পরিচালক মো. আলমগীর (পিপিএম)। সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। এ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।পরে ৩১ মে সম্পূরক অভিযোগ দেওয়া হয়। ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়। গত ১০ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সাবেক আইজিপি মামুন নিজেকে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে যে আবেদন করেছেন, তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

হাসিনা-ইনুর অডিও! ‘রামপুরা ক্লিয়ার, শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখনো আছে’

আপডেট সময় : ০৯:১৮:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর বোম্বিং করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আন্দোলনে দমনে ছত্রীসেনাও মোতায়েন করতে চেয়েছিলেন তিনি।

বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-১-এ শেখ হাসিনা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে কথোপকথনের একটি অডিও শোনানো হয়।

ফোনালাপের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, ‘রামপুরা ক্লিয়ার, শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখনো আছে।’

জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা।

তিনি এই মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর। তার উপস্থাপন করা অডিওতে আরও বলতে শোনা যায়, জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ছত্রীসেনা মোতায়েন করতে চেয়েছিলেন তৎকালীন শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেছিলেন, হেলিকপ্টার দিয়ে সেখানে বোম্বিং করা হবে।

শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও আন্দোলন দমনে বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছিলেন! এর আগে এই টেলিফোন আলাপেই শেখ হাসিনা লিথাল উইপন ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে প্রকাশ পায়। আজও সেই অডিওতে তা শোনা গেছে।

জবানবন্দির শেষ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালকে পাঁচটি অডিও দেন তানভীর হাসান। এর মধ্যে চারটি অডিও প্লে (চালানো) করা হয় আদালতে। যার মধ্যে দুটি অডিও শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনের। ট্রাইব্যুনালের আজকের এই কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর কথোপকথনের একটি অডিও অনুযায়ী,

হাসানুল হক ইনু: আমি মনে করি যে আপনার পদক্ষেপটা সঠিকই হয়েছে। এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট বাংলাদেশে পাচ্ছি আর কি। খালি ঢাকাতে আপনার রামপুরার দিকে এবং শনির আখড়াতে…।

শেখ হাসিনা: না, রামপুরা ক্লিয়ার। শনির আখড়ায় একটু ঝামেলা এখনো আছে।

ইনু: শনির আখড়ায় কিছু মোল্লারাই…।

শেখ হাসিনা: খালি মোল্লা না, সেখানে অনেক মাদরাসা। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাইকিং করতে বলেছি। নারায়ণগঞ্জে ঢুকতে দিচ্ছে না আর্মিকে। আমরা ছত্রীসেনা নামাচ্ছি।

ইনু: ওহ, আচ্ছা।

শেখ হাসিনা: আমি বলছি, ক্যাজুয়ালটির দরকার নাই। ওরা ব্যারিকেড দিয়ে আছে তো, ঠিক আছে, আকাশ থেকে নামবে। কারণ, দুই পাশ দিয়ে ধরবে… মেসেজটা দিয়ে দিতে পারেন।

ইনু: আচ্ছা।

শেখ হাসিনা: ছত্রীসেনা পাঠানো হচ্ছে। ঠিক আছে, হেলিকপ্টার দিয়ে সোজা বোম্বিং করা হবে। হেলিকপ্টার যাক, ওপর দিয়ে মারবে।

ইনু: আচ্ছা, ওপর দিয়ে সাউন্ড বোম যাবে আর কি।

হাসিনা: হুম।

জবানবন্দিতে তানভীর হাসান বলেন, গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার ফোনালাপের ৬৯টি অডিও ক্লিপ এবং তিনটি মুঠোফোন নম্বরের সিডিআর এনটিএমসি থেকে জব্দ করা হয়। ছাত্র আন্দোলন দমনে শেখ হাসিনা লেথাল উইপন ব্যবহার করে সরাসরি গুলির নির্দেশে দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের অবস্থান নির্ণয় করে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে বোম্বিং করার কথা বলেছিলেন এবং পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছিলেন।

এ মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তদন্ত সংস্থার উপ-পরিচালক মো. জানে আলম খান। পরে তদন্ত করেন উপ-পরিচালক মো. আলমগীর (পিপিএম)। সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। এ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।পরে ৩১ মে সম্পূরক অভিযোগ দেওয়া হয়। ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়। গত ১০ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সাবেক আইজিপি মামুন নিজেকে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে যে আবেদন করেছেন, তা মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।