আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি ঘিরে ফের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান সরকারের মধ্যে। ঘাঁটিটি পুনরায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও আসন্ন নির্বাচনের রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিষয়টি ঘিরে হুমকি, পাল্টা প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক তৎপরতা ইতোমধ্যে তুঙ্গে উঠেছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, বাগরাম ঘাঁটি যারা নির্মাণ করেছে, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে যদি এটি ফেরত না দেওয়া হয়, তাহলে আফগানিস্তানের জন্য ‘খারাপ কিছু’ অপেক্ষা করছে। তবে সেই ‘খারাপ কিছু’ কী হতে পারে, তা নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি তিনি।
বাগরাম ঘাঁটির গুরুত্ব নতুন কিছু নয়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালায় ওয়াশিংটন। ওই সময়ই আফগানিস্তানের প্রধান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয় কাবুলের উপকণ্ঠে অবস্থিত বাগরাম বিমানঘাঁটি। প্রায় দুই দশক ধরে এটি ছিল মার্কিন বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি। তবে ২০২১ সালে তালেবান ফের ক্ষমতায় ফিরলে এবং যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করলে ঘাঁটিটি তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
বর্তমানে সেই ঘাঁটি ফিরে পাওয়ার জন্য জোর তৎপরতা শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অন্তত এক মাস ধরে এই ইস্যুতে নিয়মিত বৈঠক করছেন। ঘাঁটিটি কৌশলগত দিক থেকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে হোয়াইট হাউসে বিস্তর আলোচনা চলছে।
সূত্র জানায়, ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য হলো চীনের উপর সরাসরি নজরদারি চালানো। কারণ, চীনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল কেন্দ্র থেকে বাগরাম ঘাঁটির দূরত্ব মাত্র ৫০০ কিলোমিটার বা এক ঘণ্টার পথ। ট্রাম্প মনে করছেন, এই ঘাঁটি পুনরায় নিয়ন্ত্রণে আনলে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বাড়বে। পাশাপাশি আফগানিস্তানের মাটিতে থাকা বিপুল পরিমাণ বিরল খনিজসম্পদ উত্তোলন, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান এবং আফগানিস্তানে মার্কিন কূটনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় চালুর ক্ষেত্রেও ঘাঁটিটি অত্যন্ত সহায়ক হবে।
তবে এসব লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে আবার আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন করতে হতে পারে। অথচ ২০২০ সালে ট্রাম্পের আমলেই যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে যে চুক্তি হয়, তাতে দেশটি থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের কথা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল। সে কারণে ঘাঁটিটি পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ক্ষেত্রে সামরিক পন্থা কতটা ব্যবহার করা হবে, কিংবা আদৌ ব্যবহার করা হবে কি না, তা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে।
ঘাঁটি ফেরত পেতে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার পথে এগোচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিলেও আফগানিস্তানের বর্তমান শাসক তালেবান সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এ নিয়ে কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। ট্রাম্পের মন্তব্যের একদিন পর, তালেবান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিফ অব স্টাফ ফাসিহউদ্দিন ফিতরাত বলেন, সম্প্রতি কিছু লোক দাবি করছে, তারা নাকি বাগরাম বিমানঘাঁটি ফিরে নেওয়ার বিষয়ে তালেবান সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আফগানিস্তানের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে দেওয়া হবে না। আমাদের এ ঘাঁটি নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি, এবং আমাদের এর প্রয়োজনও নেই।
প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্প আসলে কী করতে চান? একদিকে তিনি বলছেন, আলোচনার মাধ্যমেই ঘাঁটি ফেরত চাইছেন; অন্যদিকে হুমকিও দিচ্ছেন। হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখন আফগানিস্তানের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা ঘাঁটিটি দ্রুত ফিরে পেতে চাই। তারা যদি না দেয়, তাহলে আপনারা নিজেরাই দেখতে পাবেন, আমি কী করতে যাচ্ছি।
বাগরাম ঘাঁটির কৌশলগত গুরুত্ব নতুন নয়। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে এটি নির্মাণ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৮০-এর দশকে আফগান যুদ্ধে এটি ছিল সোভিয়েত বাহিনীর মূল ঘাঁটি। পরবর্তীতে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এটি দখলে নেয়। এখানে একটি কুখ্যাত কারাগারও পরিচালনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যেটি ‘আফগান গুয়ানতানামো’ নামে পরিচিতি পেয়েছিল। সূত্র: সিএনএন