ঢাকা ০২:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্দোলনের মোড়কে নির্বাচনী প্রস্তুতি, কৌশলী পথে জামায়াত

  • চেতনায়২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১০:৫০:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২২২ বার পড়া হয়েছে

পাঁচ দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একইসঙ্গে দলটি নিচ্ছে নির্বাচনের প্রস্তুতিও। আন্দোলন আর নির্বাচনী তৎপরতা—দুই ধারায় একযোগে মাঠে রয়েছে দলটি। বিষয়টিকে জামায়াতের কৌশলগত চাল বলে মনে করছেন অনেকে। আন্দোলনের মাধ্যমে যেমন চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তেমনি নিচতলার কর্মীদের সক্রিয় করে নির্বাচনের পথও সুগম করার চেষ্টা করছে ইসলামী ভাবধারার দলটি।

দলটির এই দ্বিমুখী কৌশলের পেছনে রয়েছে সংখ্যানুপাতিক (PR) ভিত্তিতে নির্বাচনের দাবিসহ পাঁচ দফা ইস্যু। বিশেষ করে এই পিআর দাবি নিয়ে জামায়াত শুরু থেকেই অনড়। যদিও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশে পিআর ভিত্তিক নির্বাচন বা সংসদের দুই কক্ষে রূপান্তরের বাস্তবতা নেই। তবে জামায়াত এই দাবিকে সামনে রেখেই রাজনৈতিক চাপ তৈরির চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এক্ষেত্রে বিএনপি ও সমমনা দলের ভিন্ন অবস্থানকেও একধরনের চাপ তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে জামায়াত। রাজনৈতিক সূত্র বলছে, পিআর নিয়ে ঐকমত্য না থাকলেও এই ইস্যুতে আন্দোলন জিইয়ে রেখে জামায়াত নিজস্ব রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে চেষ্টা করছে।

দলটির সাম্প্রতিক কর্মসূচি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ‘পাঁচ দফা’ দাবির পেছনে কার্যত নির্বাচনী মাঠ তৈরির কৌশল কাজ করছে। জামায়াত কেবল রাজধানীতেই নয়, জেলা-উপজেলা পর্যায়েও গণসংযোগ, জনসভা ও বিক্ষোভ কর্মসূচি করছে। এতে একদিকে যেমন জনসম্পৃক্ততা বাড়ছে, অন্যদিকে নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখা যাচ্ছে।

গেল ১৫ সেপ্টেম্বর ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের পর আবারও নতুন কর্মসূচি আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জামায়াতের প্রথম ও দ্বিতীয় সারির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলটি পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। শুধু প্রস্তুতি নয়, নির্বাচনী কর্মকাণ্ডেও ব্যস্ত সময় পার করছে জামায়াতের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী। তারা বলেন, দাবি আদায়ের আন্দোলন চলবে, কিন্তু সেটি নির্বাচনের প্রস্তুতিকে থামাবে না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ পাঁচ দফা কোনো একক দলের দাবি নয়, এটা জনগণের দাবি। এসব দাবির বিষয়ে আলোচনা যেমন চলছে, আন্দোলনও চলবে। নির্বাচনী কার্যক্রম তো দলের নিজস্ব বিষয়। এটা চলবে।

সংঘাত বা সহিংসতার আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াত রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী। সংঘাতের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তারপরও যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য দায়িত্বশীলরা সতর্ক রয়েছেন।

জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, জামায়াত নির্বাচনমুখী দল। সরকার ঘোষিত যেকোনো সময়ের নির্বাচনের জন্য দল প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমাদের কিছু দাবি আছে, তা আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলবে। কিন্তু এজন্য নির্বাচন ঠেকানোর পক্ষে জামায়াত নয়। এতে দেশে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে, যা কাম্য নয়।

দীর্ঘ ১৬ বছর ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর এখন মানুষ ভোট দিতে চায়। আমরা চাই সেই ভোট নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হোক।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে জামায়াত এখন প্রায় ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সক্রিয় তৎপরতা চলছে। সম্প্রতি চিকিৎসা শেষে আমির ডা. শফিকুর রহমান নিজেই সক্রিয় হয়েছেন মাঠের রাজনীতিতে।

রাজধানীর মগবাজারে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। যারা আমাদের ভালোবাসেন, পছন্দ করেন এবং যাদের আমরা পছন্দ করি, ভালোবাসি—তাদের সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।

তিনি সমর্থকদের আর্থিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছি।

জামায়াতের মতো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও অন্যান্য সমমনা দলগুলোও পিআর ভিত্তিক নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। এসব দল একদিকে জামায়াতের সঙ্গে অভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে, অন্যদিকে প্রকাশ্যে শক্ত অবস্থানও নিচ্ছে।

কেউ কেউ বলছেন, দাবি না মানলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। তবে ভেতরে ভেতরে তারাও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে জোরেশোরে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব বক্তব্য মূলত চাপ তৈরির কৌশল। কারণ, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া এই দলগুলোর জন্য বাস্তব রাজনীতিতে টিকে থাকা কঠিন হবে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

আন্দোলনের মোড়কে নির্বাচনী প্রস্তুতি, কৌশলী পথে জামায়াত

আপডেট সময় : ১০:৫০:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পাঁচ দফা দাবিতে রাজপথে সক্রিয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একইসঙ্গে দলটি নিচ্ছে নির্বাচনের প্রস্তুতিও। আন্দোলন আর নির্বাচনী তৎপরতা—দুই ধারায় একযোগে মাঠে রয়েছে দলটি। বিষয়টিকে জামায়াতের কৌশলগত চাল বলে মনে করছেন অনেকে। আন্দোলনের মাধ্যমে যেমন চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তেমনি নিচতলার কর্মীদের সক্রিয় করে নির্বাচনের পথও সুগম করার চেষ্টা করছে ইসলামী ভাবধারার দলটি।

দলটির এই দ্বিমুখী কৌশলের পেছনে রয়েছে সংখ্যানুপাতিক (PR) ভিত্তিতে নির্বাচনের দাবিসহ পাঁচ দফা ইস্যু। বিশেষ করে এই পিআর দাবি নিয়ে জামায়াত শুরু থেকেই অনড়। যদিও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশে পিআর ভিত্তিক নির্বাচন বা সংসদের দুই কক্ষে রূপান্তরের বাস্তবতা নেই। তবে জামায়াত এই দাবিকে সামনে রেখেই রাজনৈতিক চাপ তৈরির চেষ্টা করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এক্ষেত্রে বিএনপি ও সমমনা দলের ভিন্ন অবস্থানকেও একধরনের চাপ তৈরির ক্ষেত্র হিসেবে দেখছে জামায়াত। রাজনৈতিক সূত্র বলছে, পিআর নিয়ে ঐকমত্য না থাকলেও এই ইস্যুতে আন্দোলন জিইয়ে রেখে জামায়াত নিজস্ব রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে চেষ্টা করছে।

দলটির সাম্প্রতিক কর্মসূচি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ‘পাঁচ দফা’ দাবির পেছনে কার্যত নির্বাচনী মাঠ তৈরির কৌশল কাজ করছে। জামায়াত কেবল রাজধানীতেই নয়, জেলা-উপজেলা পর্যায়েও গণসংযোগ, জনসভা ও বিক্ষোভ কর্মসূচি করছে। এতে একদিকে যেমন জনসম্পৃক্ততা বাড়ছে, অন্যদিকে নেতাকর্মীদের সক্রিয় রাখা যাচ্ছে।

গেল ১৫ সেপ্টেম্বর ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশের পর আবারও নতুন কর্মসূচি আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জামায়াতের প্রথম ও দ্বিতীয় সারির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলটি পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। শুধু প্রস্তুতি নয়, নির্বাচনী কর্মকাণ্ডেও ব্যস্ত সময় পার করছে জামায়াতের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী। তারা বলেন, দাবি আদায়ের আন্দোলন চলবে, কিন্তু সেটি নির্বাচনের প্রস্তুতিকে থামাবে না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ পাঁচ দফা কোনো একক দলের দাবি নয়, এটা জনগণের দাবি। এসব দাবির বিষয়ে আলোচনা যেমন চলছে, আন্দোলনও চলবে। নির্বাচনী কার্যক্রম তো দলের নিজস্ব বিষয়। এটা চলবে।

সংঘাত বা সহিংসতার আশঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াত রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় বিশ্বাসী। সংঘাতের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তারপরও যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য দায়িত্বশীলরা সতর্ক রয়েছেন।

জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, জামায়াত নির্বাচনমুখী দল। সরকার ঘোষিত যেকোনো সময়ের নির্বাচনের জন্য দল প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমাদের কিছু দাবি আছে, তা আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা চলবে। কিন্তু এজন্য নির্বাচন ঠেকানোর পক্ষে জামায়াত নয়। এতে দেশে অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে, যা কাম্য নয়।

দীর্ঘ ১৬ বছর ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর এখন মানুষ ভোট দিতে চায়। আমরা চাই সেই ভোট নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর পরিবেশে হোক।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে জামায়াত এখন প্রায় ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সক্রিয় তৎপরতা চলছে। সম্প্রতি চিকিৎসা শেষে আমির ডা. শফিকুর রহমান নিজেই সক্রিয় হয়েছেন মাঠের রাজনীতিতে।

রাজধানীর মগবাজারে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। যারা আমাদের ভালোবাসেন, পছন্দ করেন এবং যাদের আমরা পছন্দ করি, ভালোবাসি—তাদের সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।

তিনি সমর্থকদের আর্থিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা নির্বাচনে বিজয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছি।

জামায়াতের মতো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও অন্যান্য সমমনা দলগুলোও পিআর ভিত্তিক নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। এসব দল একদিকে জামায়াতের সঙ্গে অভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে, অন্যদিকে প্রকাশ্যে শক্ত অবস্থানও নিচ্ছে।

কেউ কেউ বলছেন, দাবি না মানলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। তবে ভেতরে ভেতরে তারাও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে জোরেশোরে। বিশ্লেষকদের মতে, এসব বক্তব্য মূলত চাপ তৈরির কৌশল। কারণ, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া এই দলগুলোর জন্য বাস্তব রাজনীতিতে টিকে থাকা কঠিন হবে।