ঢাকা ০২:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলগা হচ্ছে ঐক্যের বাঁধন, ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে উদ্বেগ

  • চেতনায়২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১১:০৮:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ২২২ বার পড়া হয়েছে
• নির্বাচন পদ্ধতি ও জুলাই সনদ ঐকমত্য নিয়ে বিরোধ শুরু
• আন্দোলনের ফাঁকে মাঠ গোছানোর টার্গেট জামায়াতসহ অন্যদের
• আন্দোলন নিয়ে সরকারে উদ্বেগ, সন্দেহের নজর বিএনপির
• প্রকাশ্যে সমালোচনায় সরব সব দল
• বিভেদের মাঝে পতিত সরকারের মাথাচাড়া দেওয়ার শঙ্কা

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য ছিল। সরকার পতনের পরও সুসম্পর্ক ছিল চরমে। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই সেই সম্পর্কে দেখা দেয় ফাটল। ভোটের আগে সব মহল থেকে দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের যতটা প্রত্যাশা করেছিল, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে বিভক্তির চিত্র। এক সময়ের সহযোদ্ধারা এখন একে অন্যের অবস্থান নিয়ে সন্দিহান। এতে শুধু ঐক্যের বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে না, ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ নিয়েও অনিশ্চয়তার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একযোগে আন্দোলন কর্মসূচিতে নামায় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনাটা হচ্ছে বেশি। কোথায় গিয়ে এই কর্মসূচি থামবে, কিংবা আন্দোলন ঘিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না, সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কেউ কেউ একে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা হিসেবেও দেখছেন। আবার আলোচনা চলমান রেখে এমন করে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামায় বিরক্ত বিএনপিও। দলটির নেতাদের আশঙ্কা নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ার পাশাপাশি অস্থিরতার দেখা দিতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে-পরে যে ঐক্য দেখা গিয়েছিল, এখন তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। এক বছরের মধ্যে যখন পরিস্থিতি বদলে গেছে, ভবিষ্যতে কি হবে তা অবশ্যই ভাবনার বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলো যত দ্রুত পরিস্থিতি অনুধাবন করবে, ততই মঙ্গল। অন্যথায় অনিশ্চয়তা বাড়বে।’

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার মাঝেই বিভক্তি

রাজনৈতিক সংকট নিরসনে গঠিত ‘ঐকমত্য কমিশন’ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে।

অন্যদিকে শুরু থেকেই এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে আসে বিএনপি। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে জানিয়ে দলটির এই পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান দিয়েছে। বিএনপি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না। দলগুলোর দুই ধরনের অবস্থান ঘিরে ঐক্যের জায়গায় বিভক্তি প্রকট হয়ে উঠছে।

রাজনীতি কেবল ক্ষমতা দখলের খেলা হতে পারে না। মানুষের প্রকৃত ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে নতুন ব্যবস্থায় যেতে হবে। বিএনপি প্রকাশ্যে এসব দাবির বিরোধিতা করায় রাজনৈতিক মাঠে বিভক্তির সুর আরও প্রবল হয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করছে, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে পিআর পদ্ধতি জরুরি। দলটির নেতারা বলছেন, দেশের জনগণ সুষ্ঠু প্রতিনিধিত্ব চায়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় সেটি সম্ভব নয়। তাই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।

এই বক্তব্য বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ফলে বিরোধী শিবিরে ঐক্যের বদলে মতপার্থক্যই সামনে আসছে।

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও জামায়াতের সুরে সুর মিলিয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, রাজনীতি কেবল ক্ষমতা দখলের খেলা হতে পারে না। মানুষের প্রকৃত ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে নতুন ব্যবস্থায় যেতে হবে। বিএনপি প্রকাশ্যে এসব দাবির বিরোধিতা করায় রাজনৈতিক মাঠে বিভক্তির সুর আরও প্রবল হয়েছে।

যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে এনসিপি ও এবি পার্টি

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা কোনো যুগপৎ কর্মসূচির অংশ নয়।

এনসিপি নেতারা বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই শুধু স্লোগানে সম্ভব নয়। তারা বাস্তবসম্মত কর্মপদ্ধতি চান। এজন্য আপাতত যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকছেন তারা।

আর এবি পার্টির নেতারাও একই সুরে বলছেন, যতক্ষণ না সবার মধ্যে ন্যূনতম আস্থা ও অভিন্ন রূপরেখা তৈরি হচ্ছে, ততক্ষণ আমরা কোনো সম্মিলিত কর্মসূচিতে যাচ্ছি না।

সন্দেহ-সংশয়ের কবলে রাজনীতি

বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, আলোচনার ফাঁকে অন্য দলগুলোর একতরফা কর্মসূচি পুরো আন্দোলনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দলটির নেতারা বলছেন, ঐক্যের নাম যারা বলছে তারাই আবার নিজেদের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করছে। এতে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।

অন্যদিকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা মনে করেন, বিএনপি শুধু প্রচলিত ধারা আঁকড়ে ধরে পরিবর্তনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কর্মসূচির কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ায় প্রমাণ হয় জামায়াত ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে না এবং নির্বাচনকে অগ্রাহ্য করছে। দেশের মানুষ ভোটের অপেক্ষায় আছে, আর যারা ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র করবে, তারা দেশের মানুষের আস্থা হারাবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এখনও আলোচনা চলছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ইস্যুতে ঐকমত্য হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আন্দোলনের ডাক বিষয়ে জনগণের প্রশ্ন থেকে যাবে। যেটা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি এখনো, আলেচনাও চলমান, সেখানে আন্দোলন ডাকার অর্থ আলোচনার টেবিলকে অসম্মান করা।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আলোচনার মধ্যে আন্দোলন নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

রাজপথে নেমে গেলেই সমাধান হবে কি না-এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আলোচনা চলছিল, সেই অবস্থায় এ ধরণের কর্মসূচির অর্থই হচ্ছে একটা অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা। যেটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারেও শুভ নয়।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি দল সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, যে চিন্তা নিয়ে আন্দোলন হলো, একনায়কতন্ত্রের পতন হলো এখন যদি আবারও দলাদলি আর বিভেদে সবাই জড়িয়ে পড়ে তাহলে কারা উপকৃত হবে? এগুলো সবার ভাবা উচিত। আলোচনার টেবিলে সব কিছুর ফয়সালা হওয়া সবচেয়ে ভালো।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

আলগা হচ্ছে ঐক্যের বাঁধন, ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে উদ্বেগ

আপডেট সময় : ১১:০৮:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
• নির্বাচন পদ্ধতি ও জুলাই সনদ ঐকমত্য নিয়ে বিরোধ শুরু
• আন্দোলনের ফাঁকে মাঠ গোছানোর টার্গেট জামায়াতসহ অন্যদের
• আন্দোলন নিয়ে সরকারে উদ্বেগ, সন্দেহের নজর বিএনপির
• প্রকাশ্যে সমালোচনায় সরব সব দল
• বিভেদের মাঝে পতিত সরকারের মাথাচাড়া দেওয়ার শঙ্কা

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য ছিল। সরকার পতনের পরও সুসম্পর্ক ছিল চরমে। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই সেই সম্পর্কে দেখা দেয় ফাটল। ভোটের আগে সব মহল থেকে দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের যতটা প্রত্যাশা করেছিল, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে বিভক্তির চিত্র। এক সময়ের সহযোদ্ধারা এখন একে অন্যের অবস্থান নিয়ে সন্দিহান। এতে শুধু ঐক্যের বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে না, ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ নিয়েও অনিশ্চয়তার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একযোগে আন্দোলন কর্মসূচিতে নামায় রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনাটা হচ্ছে বেশি। কোথায় গিয়ে এই কর্মসূচি থামবে, কিংবা আন্দোলন ঘিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না, সেই আশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কেউ কেউ একে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা হিসেবেও দেখছেন। আবার আলোচনা চলমান রেখে এমন করে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামায় বিরক্ত বিএনপিও। দলটির নেতাদের আশঙ্কা নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ার পাশাপাশি অস্থিরতার দেখা দিতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে-পরে যে ঐক্য দেখা গিয়েছিল, এখন তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। এক বছরের মধ্যে যখন পরিস্থিতি বদলে গেছে, ভবিষ্যতে কি হবে তা অবশ্যই ভাবনার বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলো যত দ্রুত পরিস্থিতি অনুধাবন করবে, ততই মঙ্গল। অন্যথায় অনিশ্চয়তা বাড়বে।’

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার মাঝেই বিভক্তি

রাজনৈতিক সংকট নিরসনে গঠিত ‘ঐকমত্য কমিশন’ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে।

অন্যদিকে শুরু থেকেই এই পদ্ধতির বিরোধিতা করে আসে বিএনপি। এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে জানিয়ে দলটির এই পদ্ধতির বিপক্ষে অবস্থান দিয়েছে। বিএনপি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে তারা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না। দলগুলোর দুই ধরনের অবস্থান ঘিরে ঐক্যের জায়গায় বিভক্তি প্রকট হয়ে উঠছে।

রাজনীতি কেবল ক্ষমতা দখলের খেলা হতে পারে না। মানুষের প্রকৃত ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে নতুন ব্যবস্থায় যেতে হবে। বিএনপি প্রকাশ্যে এসব দাবির বিরোধিতা করায় রাজনৈতিক মাঠে বিভক্তির সুর আরও প্রবল হয়েছে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করছে, বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে পিআর পদ্ধতি জরুরি। দলটির নেতারা বলছেন, দেশের জনগণ সুষ্ঠু প্রতিনিধিত্ব চায়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় সেটি সম্ভব নয়। তাই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।

এই বক্তব্য বিএনপির অবস্থানের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ফলে বিরোধী শিবিরে ঐক্যের বদলে মতপার্থক্যই সামনে আসছে।

অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও জামায়াতের সুরে সুর মিলিয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, রাজনীতি কেবল ক্ষমতা দখলের খেলা হতে পারে না। মানুষের প্রকৃত ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে নতুন ব্যবস্থায় যেতে হবে। বিএনপি প্রকাশ্যে এসব দাবির বিরোধিতা করায় রাজনৈতিক মাঠে বিভক্তির সুর আরও প্রবল হয়েছে।

যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে এনসিপি ও এবি পার্টি

এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা কোনো যুগপৎ কর্মসূচির অংশ নয়।

এনসিপি নেতারা বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই শুধু স্লোগানে সম্ভব নয়। তারা বাস্তবসম্মত কর্মপদ্ধতি চান। এজন্য আপাতত যুগপৎ আন্দোলনের বাইরে থাকছেন তারা।

আর এবি পার্টির নেতারাও একই সুরে বলছেন, যতক্ষণ না সবার মধ্যে ন্যূনতম আস্থা ও অভিন্ন রূপরেখা তৈরি হচ্ছে, ততক্ষণ আমরা কোনো সম্মিলিত কর্মসূচিতে যাচ্ছি না।

সন্দেহ-সংশয়ের কবলে রাজনীতি

বিএনপির নেতাদের অভিযোগ, আলোচনার ফাঁকে অন্য দলগুলোর একতরফা কর্মসূচি পুরো আন্দোলনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দলটির নেতারা বলছেন, ঐক্যের নাম যারা বলছে তারাই আবার নিজেদের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করছে। এতে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে।

অন্যদিকে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা মনে করেন, বিএনপি শুধু প্রচলিত ধারা আঁকড়ে ধরে পরিবর্তনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কর্মসূচির কড়া সমালোচনা করে বলেছেন, আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ায় প্রমাণ হয় জামায়াত ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে না এবং নির্বাচনকে অগ্রাহ্য করছে। দেশের মানুষ ভোটের অপেক্ষায় আছে, আর যারা ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র করবে, তারা দেশের মানুষের আস্থা হারাবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই।

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এখনও আলোচনা চলছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ইস্যুতে ঐকমত্য হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আন্দোলনের ডাক বিষয়ে জনগণের প্রশ্ন থেকে যাবে। যেটা নিয়ে ঐকমত্য হয়নি এখনো, আলেচনাও চলমান, সেখানে আন্দোলন ডাকার অর্থ আলোচনার টেবিলকে অসম্মান করা।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আলোচনার মধ্যে আন্দোলন নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

রাজপথে নেমে গেলেই সমাধান হবে কি না-এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আলোচনা চলছিল, সেই অবস্থায় এ ধরণের কর্মসূচির অর্থই হচ্ছে একটা অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা। যেটা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারেও শুভ নয়।

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি দল সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, যে চিন্তা নিয়ে আন্দোলন হলো, একনায়কতন্ত্রের পতন হলো এখন যদি আবারও দলাদলি আর বিভেদে সবাই জড়িয়ে পড়ে তাহলে কারা উপকৃত হবে? এগুলো সবার ভাবা উচিত। আলোচনার টেবিলে সব কিছুর ফয়সালা হওয়া সবচেয়ে ভালো।