বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দীর্ঘ ছয় বছর পর হওয়া নির্বাচনে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা প্রবল উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনার সঙ্গে তাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্যানেল। ভিপি, জিএস, এজিএসসহ ২৮ পদের ২৩টিই দখলে নিয়েছে তারা। অন্যদিকে ভরাডুবি হয়েছে ছাত্রদলের প্যানেলের। একটি পদও পায়নি তারা।
ছাত্রদলের এই ভরাডুবির কী কারণ
এ নিয়ে ঢাবির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জিহান মুহুরি বলেন, ছাত্রসংগঠনটির অনেক ত্রুটি আছে। ছাত্রদলের প্যানেলের মধ্যে মেকানিজমগত কারণে শিবির এবং তাদের মধ্যে ভোটের এত বড় ফারাক হয়েছে।
বিজয় একাত্তর হলে শিবির সমর্থিত প্যানেলে ভিপি পদে জয় পাওয়া মো. আশিক বিল্লাহ বলেন, ছাত্রদল পলিটিক্সই বোঝে না। তারা শিক্ষার্থীদের পালস বুঝতে চায় না। ভালো রাজনীতি করতে হলে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের পালস বুঝতে হবে, সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাসরুল্লাহ ফাহিম বলেন, শিবিরের প্যানেল ছাড়া শিক্ষার্থীরা অন্য কোনো প্যানেলে যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পায়নি। যার কারণে জনপ্রিয় ছাত্রসংগঠন হয়েও শিবিরের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছে ছাত্রদল।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রদল শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি নির্বাচনের আগেও তাদের প্যানেলের সদস্যদের আচার-আচরণ ঠিক ছিল না। যার কারণে তাদের আগের জনপ্রিয়তা নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তলানিতে চলে গেছে।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আলি বলেন, ছাত্রদল যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আগেই গণরুম-গেস্টরুম প্রথা চালু করেছিল, সে জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা শঙ্কায় ছিল, ক্ষমতা পেয়ে তারা আবার সেই প্রথা চালু করবে কি না। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা অনেক অকারেন্স করেছে, সারাদেশের মানুষ তা পত্রিকায় এবং সামাজিক মাধ্যমে দেখেছে।
ছাত্রদলের প্রতি এই শিক্ষার্থীর আহ্বান, আগামী ১ বছর তারা যদি শিক্ষার্থীদের জন্য সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে, তবে সামনের ডাকসু নির্বাচনে আরও ভালো করতে পারবে। তাদেরকে জয়-পরাজয় মেনে নিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে হবে।
ডাকসুর সদস্য পদপ্রার্থী মিরাজ হোসাইন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ছাত্রদল আবিদুল ইসলাম খানের মতো একজন ভার্সেটাইল নেতাকে ঠিকভাবে কাজে খাটাইতে পারেনি। এই সত্যটা মানতে হবে। এত বড় একটা সংগঠনের ভিপি প্রার্থীকে অন্তত কয়েকমাস আগে মাঠে নামাইতে হইতো। যাতে করে সবাই তার কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে পারতো। কিন্তু ছাত্রদল তা করতে পারেনি, এটা তাদের অনেক বড় সাংগঠনিক ব্যর্থতা এবং অদূরদর্শীতা।
তিনি আরও লিখেছেন, সবকিছু মিলিয়ে আবিদুল ইসলাম খানকে ওনার সংগঠন কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়া যুদ্ধের মাঠে নামায়া দিছে। ছাত্রদলের রাজনীতি নতুনভাবে নির্মাণ করতে হবে। পুরনো ধাঁচের রাজনীতি শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেছে।
সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের মতামত, শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে যারা কাজ করতে পারবে, তারাই হবে প্রতিনিধি। সে যে দলের রাজনীতিই করুক না কেন। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দল এবং ছাত্রসংগঠনগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে বলে মন্তব্য তাদের।