গাজার দক্ষিণাঞ্চলের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি হামলায় পাঁচ সাংবাদিকসহ অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে চিকিৎসক ও উদ্ধারকর্মীও রয়েছেন।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা, যা বেসামরিক জনগণ ও গাজার ক্ষতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। খবর বিবিসির।
ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রথম বিস্ফোরণের পর আহতদের উদ্ধারে আসা উদ্ধারকর্মী ও সাংবাদিকদের ওপর দ্বিতীয়বার হামলা চালানো হয়।
নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে আছেন আলজাজিরার মোহাম্মদ সালামা, রয়টার্সের ক্যামেরাপারসন হুসাম আল-মাসরি, এপির সঙ্গে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করা মারিয়াম আবু, মিডল ইস্ট আইয়ের আহমেদ আবু আজিজ এবং ফটোগ্রাফার মুয়াজ আবু তাহা।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স, এপি, আলজাজিরা ও মিডল ইস্ট আই নিশ্চিত করেছে, নিহত সাংবাদিকরা তাদের হয়ে কাজ করছিলেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান জানিয়েছেন, এ হামলায় চারজন স্বাস্থ্যকর্মীও নিহত হয়েছেন।
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড আবারও প্রমাণ করে চিকিৎসাকর্মী ও সাংবাদিকরা কী ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।” তিনি দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা দুর্ভিক্ষে নীরবে মারা যাওয়া শিশুদের নিয়ে প্রতিবেদন করা শেষ কণ্ঠগুলোও স্তব্ধ করছে।
এ হামলার ঘটনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তার কার্যালয় থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। সেখানে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল সাংবাদিক, চিকিৎসক এবং বেসামরিক মানুষের কাজকে মূল্যবান মনে করে।
তিনি আরো বলেন, সামরিক কর্তৃপক্ষ একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালাচ্ছে। আমাদের যুদ্ধ হামাস সন্ত্রাসীদের সঙ্গে। আমাদের ন্যায্য লক্ষ্য হলো হামাসকে পরাজিত করা এবং আমাদের জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনা।
মাত্র দুই সপ্তাহ আগে গাজায় হামলা চালিয়ে আলজাজিরার চার সাংবাদিকসহ ছয় সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। আলজাজিরা জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত এক দিনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৫৮ জনের মরদেহ হাসপাতালে পৌঁছেছে। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা আরো বহু মরদেহ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। নিহতদের মধ্যে ২৮ জন ছিলেন যারা খাদ্য সহায়তার জন্য ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। এছাড়া, অনাহারে আরো ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজন শিশু। এখন পর্যন্ত অনাহারে মারা গেছে ৩০০ জন, যার মধ্যে রয়েছে ১১৭ জন শিশু।