ঢাকা ০২:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বৈরাচারের দোসরদের বিচারের দাবিতে চট্রগ্রাম সমিতির সংবাদ সম্মেলন

জুলাই বিপ্লবের শহীদদের জন্য দোয়া ও আহত বীরদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে বাঁধাদানকারী স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতি। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতি দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত পতিত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের দোসররা বিনা ভোটে সমিতিকে কুক্ষিগত করে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করেছে। এখানে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী তথা অন্য কোন মতের বিশ্বাসীদের কোন স্থান ছিল না।চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী ও ধান্দাবাজদের নিরাপদ আশ্রয় ছিল এই সমিতি।

তিনি আরও বলেন, পুরান ঢাকার নবাবপুরস্থ চিটাগাং বিল্ডার্সের মালিক কামাল, জামাল, নাসির ও রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গুলি সরবরহাকারী উজ্জল মল্লিকসহ খুনি হাসিনার দোসরা এই সমিতিকে নিজেদের স্বার্থে কুক্ষিগত করে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এস আলমের অর্থ পাচারের – অন্যতম সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করে। পুরস্কার স্বরূপ এস আলম তাদেরকে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন। অর্থ পাচারকারী চিটাগাং বিল্ডার্সের কামাল, জামাল ও নাসির গংদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ্যাডভোকেট ফরিদ বলেন, ৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্রজনতার বিপ্লবের পরেও ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের দোসররা এই সমিতিতে বীরদর্পে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। ৫ আগস্ট ২০২৪ বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ঢাকাস্থ দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক সমিতি সমূহ স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত হলেও এক অদৃশ্য কারণে “চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা” স্বৈরাচারের দোসর মুক্ত হয়নি।

এরই প্রেক্ষাপটে বিগত ১২ এপ্রিল ২০২৫ জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সহ ফ্যাসিস্ট বিরোধী জীবন সদস্যবৃন্দ “চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা” কে ফ্যাসিস্ট মুক্ত করে জরুরী এজিএমের মাধ্যমে একটি এডহক কমিটি গঠন করে। এডহক কমিটি ১৪ এপ্রিল ২০২৫ বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

১৩ এপ্রিল ২০২৫ এডহক কমিটির বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি সভা চলাকালীন সময়ে রাত আনুমানিক ০৯ ঘটিকার সময় চিটাগাং বা কমিটির চিহ্নিত এস আলমের অর্থ পাচারের সহযোগী নাসিরের নেতৃত্বে স্বৈরাচারের দোসররা সমিতি ভবনে হামলা চালিয়ে দরজা বন্ধ করে এডহক কমিটির সম্মানিত আহ্বায়ক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম রাজুকে মারপিট করে মারাত্মকভাবে আহত করে। চিটাগাং বিল্ডার্স গং জুলাই যোদ্ধা বাম চোখ হারানো এমদাদ বাবুকেও মারাত্মকভাবে আহত করে।

পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ফরিদ উদ্দিন বলেন, জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের আত্মদানের বিনিময়ে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। বিগত ১৮ জুলাই ২০২৫ জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে দোয়া এবং আহত বীরদের সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে “চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা” এডহক কমিটি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় পুলিশ প্রশাসন ফ্যাসিবাদী কায়দায় আমাদের এই শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানটি বাধাগ্রস্ত করেছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনের এই অমানবিক আচরণকে শুধু দুঃখজনক বলব না আমরা এটিকে জুলাই বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের প্রতি চরম অসম্মান ও বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করি।

অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, হামলার ৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো স্বৈরাচারের দোসর সন্ত্রাসীরা এক অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাহিরে। এসব স্বৈরাচারের দোসররা উল্টো এডহক কমিটির নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমরা অনতিবিলম্বে স্বৈরাচারের চিহ্নিত দোসরদের সকল ষড়যন্ত্র বন্ধের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের আত্মত্যাগের প্রতি চরম অসম্মান জানানো শাহবাগ থানার ওসি কে প্রত্যাহার এবং এর সাথে জড়িত পুলিশ প্রশাসনের অন্যান্য সদস্যদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিম চৌধুরী বলেন, জুলাই আন্দোলনে দেশের আপামর জনতা বুক পেতে দিয়ে এই দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিতারিত করে দেশকে মুক্ত করেছে। যেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এটাকে কোন অভ্যস্থান না বলে বিপ্লব বলা যেতে পারে। যে বিপ্লব মানুষের সামগ্রিক পরিবর্তন ঘটায়। বিগত ১৬ বছরে একদিনও রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল অবরোধ করতে পারেনি। কিন্তু ছাত্ররা পুলিশের গুলিকে উপেক্ষা করে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। যেখানে রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হয়েছে। দেশকে এক ডাইনির হাত থেকে মুক্ত করে আরেক ডাইনির হাতে দিতে চাই না।

তিনি আরও বলেন, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির বয়স ১০০ বছরও ঊর্ধ্বে। বিগত সময়ে এই সমিতিকে কুচক্রী দুর্নীতি পরায়ণ গোষ্ঠী নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে মন্ত্রী ছিলেন। তারা কখনো চট্টগ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়ায় নাই। তারা এই সময় থেকে ব্যবহার করে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেছে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

স্বৈরাচারের দোসরদের বিচারের দাবিতে চট্রগ্রাম সমিতির সংবাদ সম্মেলন

আপডেট সময় : ০৩:৫৩:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

জুলাই বিপ্লবের শহীদদের জন্য দোয়া ও আহত বীরদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে বাঁধাদানকারী স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতি। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।

ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন খান এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতি দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত পতিত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের দোসররা বিনা ভোটে সমিতিকে কুক্ষিগত করে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করেছে। এখানে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী তথা অন্য কোন মতের বিশ্বাসীদের কোন স্থান ছিল না।চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী ও ধান্দাবাজদের নিরাপদ আশ্রয় ছিল এই সমিতি।

তিনি আরও বলেন, পুরান ঢাকার নবাবপুরস্থ চিটাগাং বিল্ডার্সের মালিক কামাল, জামাল, নাসির ও রাজউকের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে গুলি সরবরহাকারী উজ্জল মল্লিকসহ খুনি হাসিনার দোসরা এই সমিতিকে নিজেদের স্বার্থে কুক্ষিগত করে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এস আলমের অর্থ পাচারের – অন্যতম সহযোগী হিসেবে ভূমিকা পালন করে। পুরস্কার স্বরূপ এস আলম তাদেরকে বিভিন্ন ব্যাংকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন। অর্থ পাচারকারী চিটাগাং বিল্ডার্সের কামাল, জামাল ও নাসির গংদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

এ্যাডভোকেট ফরিদ বলেন, ৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্রজনতার বিপ্লবের পরেও ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের দোসররা এই সমিতিতে বীরদর্পে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। ৫ আগস্ট ২০২৪ বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ঢাকাস্থ দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক সমিতি সমূহ স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত হলেও এক অদৃশ্য কারণে “চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা” স্বৈরাচারের দোসর মুক্ত হয়নি।

এরই প্রেক্ষাপটে বিগত ১২ এপ্রিল ২০২৫ জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী সহ ফ্যাসিস্ট বিরোধী জীবন সদস্যবৃন্দ “চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা” কে ফ্যাসিস্ট মুক্ত করে জরুরী এজিএমের মাধ্যমে একটি এডহক কমিটি গঠন করে। এডহক কমিটি ১৪ এপ্রিল ২০২৫ বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

১৩ এপ্রিল ২০২৫ এডহক কমিটির বাংলা নববর্ষ উদযাপনের প্রস্তুতি সভা চলাকালীন সময়ে রাত আনুমানিক ০৯ ঘটিকার সময় চিটাগাং বা কমিটির চিহ্নিত এস আলমের অর্থ পাচারের সহযোগী নাসিরের নেতৃত্বে স্বৈরাচারের দোসররা সমিতি ভবনে হামলা চালিয়ে দরজা বন্ধ করে এডহক কমিটির সম্মানিত আহ্বায়ক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম রাজুকে মারপিট করে মারাত্মকভাবে আহত করে। চিটাগাং বিল্ডার্স গং জুলাই যোদ্ধা বাম চোখ হারানো এমদাদ বাবুকেও মারাত্মকভাবে আহত করে।

পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে ফরিদ উদ্দিন বলেন, জুলাই বিপ্লবে শহীদ ও আহতদের আত্মদানের বিনিময়ে আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। বিগত ১৮ জুলাই ২০২৫ জুলাই বিপ্লবের শহীদদের স্মরণে দোয়া এবং আহত বীরদের সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে “চট্টগ্রাম সমিতি-ঢাকা” এডহক কমিটি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় পুলিশ প্রশাসন ফ্যাসিবাদী কায়দায় আমাদের এই শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠানটি বাধাগ্রস্ত করেছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনের এই অমানবিক আচরণকে শুধু দুঃখজনক বলব না আমরা এটিকে জুলাই বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের প্রতি চরম অসম্মান ও বিশ্বাসঘাতকতা বলে মনে করি।

অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, হামলার ৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো স্বৈরাচারের দোসর সন্ত্রাসীরা এক অদৃশ্য কারণে ধরাছোঁয়ার বাহিরে। এসব স্বৈরাচারের দোসররা উল্টো এডহক কমিটির নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমরা অনতিবিলম্বে স্বৈরাচারের চিহ্নিত দোসরদের সকল ষড়যন্ত্র বন্ধের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। আমরা অবিলম্বে জুলাই শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের আত্মত্যাগের প্রতি চরম অসম্মান জানানো শাহবাগ থানার ওসি কে প্রত্যাহার এবং এর সাথে জড়িত পুলিশ প্রশাসনের অন্যান্য সদস্যদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিম চৌধুরী বলেন, জুলাই আন্দোলনে দেশের আপামর জনতা বুক পেতে দিয়ে এই দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিতারিত করে দেশকে মুক্ত করেছে। যেটা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এটাকে কোন অভ্যস্থান না বলে বিপ্লব বলা যেতে পারে। যে বিপ্লব মানুষের সামগ্রিক পরিবর্তন ঘটায়। বিগত ১৬ বছরে একদিনও রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল অবরোধ করতে পারেনি। কিন্তু ছাত্ররা পুলিশের গুলিকে উপেক্ষা করে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। যেখানে রাজনীতিবিদরা ব্যর্থ হয়েছে। দেশকে এক ডাইনির হাত থেকে মুক্ত করে আরেক ডাইনির হাতে দিতে চাই না।

তিনি আরও বলেন, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির বয়স ১০০ বছরও ঊর্ধ্বে। বিগত সময়ে এই সমিতিকে কুচক্রী দুর্নীতি পরায়ণ গোষ্ঠী নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে মন্ত্রী ছিলেন। তারা কখনো চট্টগ্রামের মানুষের পাশে দাঁড়ায় নাই। তারা এই সময় থেকে ব্যবহার করে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেছে।