ঢাকা ০২:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপিতে ‘আশ্রয়’ পাচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকজন!

  • চেতনায়২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৯:০৪:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫
  • ২৪১ বার পড়া হয়েছে

গত বছরের ডিসেম্বরে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি হন আরজিনা পারভীন চাদনী, যিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এমনকী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দলটি থেকে সংরক্ষিত আসনের এমপি প্রার্থী হতে মনোনয়নও নিয়েছিলেন। ওবায়দুল কাদের, সালমান এফ রহমানসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ছবিও আছে তার। এতকিছুর পরও আরজিনাকে সভাপতি হিসেবে বেছে নেন গাইবান্ধা জেলা মহিলা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সমালোচনার মুখে স্থগিত করা হয় কমিটি।

টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেত্রীকে উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি পদে বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতো গেল মহিলা দলের খবর।

সম্প্রতি বিএনপির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জিয়া সাইবার ফোর্সের (জেসিএফ) পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) শাখার আহ্বায়ক কমিটি হয়। যাতে ঠাঁই পান নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকর্মী। মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় এই খবর। দ্রুততার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বিবৃতি দেয় বিএনপি। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই কমিটির সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

শুধু তাই নয়, নির্দেশনা দিয়ে বলা হয় বিএনপির এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত কোনো স্তরের কমিটিতে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে যোগদান করানো যাবে না।

এদিকে কমিটিতে পদ দিয়ে ক্ষ্যান্ত হননি অনেক বিএনপির লোকজন। ১৬ বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করে রাখা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে অন্যায়-অপকর্মেও জড়ানোরও অভিযোগ উঠেছে বিএনপির তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। পুলিশের গাড়ি থেকে যুবলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে, যা নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর থেকে ফুরফুরে থাকা বিএনপিতে অস্বস্তি বিরাজ করছে।

অবশ্য শুরু থেকেই অন্যায়-অপকর্মে জড়ানো নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে বিএনপির হাইকমান্ড। অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও বারবার তৃণমূলকে কঠোর বার্তা দিচ্ছেন। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।

আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা আরজিনাকে পলাশবাড়ী উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি করা হয়। পরে সমালোচনার মুখে কমিটি স্থগিত করা হয়।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, একশ্রেণির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের প্রশ্রয়ে আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতাকর্মীরা পদ পাচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতননিপীড়নে যুক্ত অনেকে ভোল পাল্টে বিএনপির সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এসব কঠোরভাবে বন্ধ করার পাশাপাশি ত্যাগীদের মূল্যায়নের আহ্বান জানান তারা।

এমন পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশ বন্ধে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কেন্দ্র থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের দলে ঢুকানোর জিরো পারসেন্ট সুযোগ নেই। যাদের হাত ধরে অনুপ্রবেশকারীরা সহযোগিতা পাবে, প্রমাণ পেলে তারা বিএনপি করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলবেন।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, এ নিয়ে সারাদেশের প্রত্যেক ইউনিটে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। কথা পরিষ্কার আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের দলে জায়গা দেওয়া তো দূরের কথা, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখারই সুযোগ নেই। এই নির্দেশনার ব্যত্যয় হলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নতুনদের মধ্যে যারা বিএনপির রাজনীতিকে ভালোবাসে, জিয়াউর রহমানের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে চায় তাদের স্বাগতম।

যেভাবে বিএনপিতে ঘেঁষছে আওয়ামী লীগ!

গত ৫ অক্টোবর ছাত্র হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভোগদখল ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রাজধানীর তুরাগে প্রতিবাদ সভা করে বিএনপি। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির নেতা মোস্তফা জামান। অথচ সভার মঞ্চে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। যা নিয়ে দলের ভেতরেই সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা জানান, মোস্তফা জামানের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ খোকা, হাজী জহির ও আজাহারুল ইসলামসহ কয়েকজন পদধারী। অথচ মঞ্চে তারা বাদে প্রায় সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের পদধারী।

মঞ্চে দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের তুরাগ থানার সাধারণ সম্পাদক আশরাফ খান, যুবলীগ নেতা সোহেল রানা, সানাউল্লাহ, সাবেক এমপি হাবিবের বোনের স্বামী ইসহাক, কৃষকলীগের তুরাগ থানার ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা সেলিম মাদবর, হাজী আব্দুল্লাহ ও আশরাফ খান। এদের কেউ সাবেক এমপি হাবিবের নিকটাত্মীয়, কেউ আবার ছিলেন ঘনিষ্ঠ।

গত ১ ডিসেম্বর গাজীপুরে পুলিশের হাতে আটক যুবলীগের পদধারী এক নেতার প্রতি সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেন স্থানীয় যুবদল নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের পতনের পর নাটোরের সিংড়ায় বিএনপির জনসভায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের স্ত্রী আরিফা জেসমিনের চাচাতো বোন ফারজানা রহমান দৃষ্টি।

জানা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি রাজুকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেয় ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মামুন শিকদার। পরে এই ঘটনায় যুবদল নেতাকে ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর আলোচনার জন্ম দেয় নাটোরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মঞ্চে কারাবন্দি তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালিকা ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টির বসার ঘটনা। ওইদিন নাটোরের সিংড়া উপজেলায় বিএনপির জনসভায় দৃষ্টিকে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের পেছনের সারিতে বসে থাকতে দেখা গেছে। যা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।

জানা গেছে, ফারজানা রহমান দৃষ্টি সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনুর ভাতিজি ও পলকের স্ত্রী আরিফা জেসমিনের চাচাতো বোন। কড়া সমালোচনা শুরু হলে বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনুকে শোকজ করে জেলা বিএনপি।

বিএনপিতে কর্মীর অভাব নেই। আমাদের নেতা তারেক রহমান আওয়ামী লীগের ওপর হামলা না হয় সেই নির্দেশ দিয়েছেন। যে কারণে আইন হাতে তুলে নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু দলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিছু ঘটনা ঘটলেও সামনে আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আশা করি পুনরাবৃত্তি হবে না।

তারও আগে নভেম্বরের শুরুর দিকে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা বিএনপির কমিটি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের লোকজন পদ পায় বলে অভিযোগ ওঠে। এমন অভিযোগ করে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।

জানা গেছে, জাজিরার মূলনা ইউনিয়ন বিএনপির কর্মীসভায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সর্দার একেএম নাছির উদ্দীন কালুর উপস্থিতিতে উপজেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৩১ সদস্যের ওই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সুরুজ মাদবর ও শাহিন শিকদার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর সমর্থক ও আওয়ামী লীগ নেতা।

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে বিএনপি নেতা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দেন। সারাদেশ যখন আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার, বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ, ঠিক তখনই রাঙ্গাবালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহমান ফরাজির এমন ঘোষণায় সমালোচনার ঝড় ওঠে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বিএনপি নেতাকে বলতে শোনা যায়, রাঙ্গাবালীতে আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয় দেবে বিএনপি। আমি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহমান ফরাজি আপনাদের পাশে আছি।

যদিও বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হলে বিএনপির ওই নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, আমি বিষয়টি আসলে ওভাবে বলিনি। যারা নিরীহ আওয়ামী লীগ তাদেরকে আমি দলে আসতে বলেছি। আর যারা সন্ত্রাস করেছে তাদের ব্যাপারে কোনো ছাড় নাই।

গত ৮ ডিসেম্বর ঘোষিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিতেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ পদ পেয়েছেন এমনটা দেখা গেছে। নানামুখী হিসাব-নিকাশের পর ঘোষিত ৬১ সদস্যের কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ১৩ জন এবং সদস্য হন ৪৬ জন।

দেখা গেছে, ১৩ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুর রহমান মজু আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আফজালুর রহমান বাবুর সহচর। আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে তিনি সক্রিয় ছিলেন।

মহানগর দক্ষিণের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, বর্তমানে থানা কমিটি গোছানোর কাজ চলছে। সিভি নেওয়া হচ্ছে। স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগসহ অন্য দলের কাউকে নেওয়া যাবে না। এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বিএনপিতে কর্মীর অভাব নেই। আমাদের নেতা তারেক রহমান আওয়ামী লীগের ওপর হামলা না হয় সেই নির্দেশ দিয়েছেন। যে কারণে আইন হাতে তুলে নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু দলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিছু ঘটনা ঘটলেও সামনে আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আশা করি পুনরাবৃত্তি হবে না।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

বিএনপিতে ‘আশ্রয়’ পাচ্ছে আওয়ামী লীগের লোকজন!

আপডেট সময় : ০৯:০৪:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫

গত বছরের ডিসেম্বরে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি হন আরজিনা পারভীন চাদনী, যিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এমনকী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দলটি থেকে সংরক্ষিত আসনের এমপি প্রার্থী হতে মনোনয়নও নিয়েছিলেন। ওবায়দুল কাদের, সালমান এফ রহমানসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ছবিও আছে তার। এতকিছুর পরও আরজিনাকে সভাপতি হিসেবে বেছে নেন গাইবান্ধা জেলা মহিলা দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সমালোচনার মুখে স্থগিত করা হয় কমিটি।

টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেত্রীকে উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি পদে বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতো গেল মহিলা দলের খবর।

সম্প্রতি বিএনপির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জিয়া সাইবার ফোর্সের (জেসিএফ) পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) শাখার আহ্বায়ক কমিটি হয়। যাতে ঠাঁই পান নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকর্মী। মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় এই খবর। দ্রুততার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বিবৃতি দেয় বিএনপি। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই কমিটির সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

শুধু তাই নয়, নির্দেশনা দিয়ে বলা হয় বিএনপির এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত কোনো স্তরের কমিটিতে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে যোগদান করানো যাবে না।

এদিকে কমিটিতে পদ দিয়ে ক্ষ্যান্ত হননি অনেক বিএনপির লোকজন। ১৬ বছর ধরে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করে রাখা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে অন্যায়-অপকর্মেও জড়ানোরও অভিযোগ উঠেছে বিএনপির তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। পুলিশের গাড়ি থেকে যুবলীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে, যা নিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর থেকে ফুরফুরে থাকা বিএনপিতে অস্বস্তি বিরাজ করছে।

অবশ্য শুরু থেকেই অন্যায়-অপকর্মে জড়ানো নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে বিএনপির হাইকমান্ড। অনুপ্রবেশকারীদের ঠেকাতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতারাও বারবার তৃণমূলকে কঠোর বার্তা দিচ্ছেন। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।

আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা আরজিনাকে পলাশবাড়ী উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি করা হয়। পরে সমালোচনার মুখে কমিটি স্থগিত করা হয়।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, একশ্রেণির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের প্রশ্রয়ে আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতাকর্মীরা পদ পাচ্ছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতননিপীড়নে যুক্ত অনেকে ভোল পাল্টে বিএনপির সঙ্গে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এসব কঠোরভাবে বন্ধ করার পাশাপাশি ত্যাগীদের মূল্যায়নের আহ্বান জানান তারা।

এমন পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশ বন্ধে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের কেন্দ্র থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, অনুপ্রবেশকারীদের দলে ঢুকানোর জিরো পারসেন্ট সুযোগ নেই। যাদের হাত ধরে অনুপ্রবেশকারীরা সহযোগিতা পাবে, প্রমাণ পেলে তারা বিএনপি করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলবেন।

স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, এ নিয়ে সারাদেশের প্রত্যেক ইউনিটে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। কথা পরিষ্কার আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের দলে জায়গা দেওয়া তো দূরের কথা, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখারই সুযোগ নেই। এই নির্দেশনার ব্যত্যয় হলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নতুনদের মধ্যে যারা বিএনপির রাজনীতিকে ভালোবাসে, জিয়াউর রহমানের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতে চায় তাদের স্বাগতম।

যেভাবে বিএনপিতে ঘেঁষছে আওয়ামী লীগ!

গত ৫ অক্টোবর ছাত্র হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ভোগদখল ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে রাজধানীর তুরাগে প্রতিবাদ সভা করে বিএনপি। যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির নেতা মোস্তফা জামান। অথচ সভার মঞ্চে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। যা নিয়ে দলের ভেতরেই সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা জানান, মোস্তফা জামানের সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ খোকা, হাজী জহির ও আজাহারুল ইসলামসহ কয়েকজন পদধারী। অথচ মঞ্চে তারা বাদে প্রায় সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের পদধারী।

মঞ্চে দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের তুরাগ থানার সাধারণ সম্পাদক আশরাফ খান, যুবলীগ নেতা সোহেল রানা, সানাউল্লাহ, সাবেক এমপি হাবিবের বোনের স্বামী ইসহাক, কৃষকলীগের তুরাগ থানার ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ইসলাম উদ্দিন, আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা সেলিম মাদবর, হাজী আব্দুল্লাহ ও আশরাফ খান। এদের কেউ সাবেক এমপি হাবিবের নিকটাত্মীয়, কেউ আবার ছিলেন ঘনিষ্ঠ।

গত ১ ডিসেম্বর গাজীপুরে পুলিশের হাতে আটক যুবলীগের পদধারী এক নেতার প্রতি সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেন স্থানীয় যুবদল নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের পতনের পর নাটোরের সিংড়ায় বিএনপির জনসভায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের স্ত্রী আরিফা জেসমিনের চাচাতো বোন ফারজানা রহমান দৃষ্টি।

জানা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি রাজুকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের গাড়ি থেকে ছিনিয়ে নেয় ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মামুন শিকদার। পরে এই ঘটনায় যুবদল নেতাকে ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

এই ঘটনার পর আলোচনার জন্ম দেয় নাটোরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মঞ্চে কারাবন্দি তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালিকা ডা. ফারজানা রহমান দৃষ্টির বসার ঘটনা। ওইদিন নাটোরের সিংড়া উপজেলায় বিএনপির জনসভায় দৃষ্টিকে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের পেছনের সারিতে বসে থাকতে দেখা গেছে। যা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।

জানা গেছে, ফারজানা রহমান দৃষ্টি সিংড়া উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনুর ভাতিজি ও পলকের স্ত্রী আরিফা জেসমিনের চাচাতো বোন। কড়া সমালোচনা শুরু হলে বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনুকে শোকজ করে জেলা বিএনপি।

বিএনপিতে কর্মীর অভাব নেই। আমাদের নেতা তারেক রহমান আওয়ামী লীগের ওপর হামলা না হয় সেই নির্দেশ দিয়েছেন। যে কারণে আইন হাতে তুলে নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু দলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিছু ঘটনা ঘটলেও সামনে আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আশা করি পুনরাবৃত্তি হবে না।

তারও আগে নভেম্বরের শুরুর দিকে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা বিএনপির কমিটি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের লোকজন পদ পায় বলে অভিযোগ ওঠে। এমন অভিযোগ করে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।

জানা গেছে, জাজিরার মূলনা ইউনিয়ন বিএনপির কর্মীসভায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সর্দার একেএম নাছির উদ্দীন কালুর উপস্থিতিতে উপজেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৩১ সদস্যের ওই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সুরুজ মাদবর ও শাহিন শিকদার আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর সমর্থক ও আওয়ামী লীগ নেতা।

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে বিএনপি নেতা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দেন। সারাদেশ যখন আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার, বিন্দু পরিমাণ ছাড় দিতে নারাজ, ঠিক তখনই রাঙ্গাবালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহমান ফরাজির এমন ঘোষণায় সমালোচনার ঝড় ওঠে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বিএনপি নেতাকে বলতে শোনা যায়, রাঙ্গাবালীতে আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয় দেবে বিএনপি। আমি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহমান ফরাজি আপনাদের পাশে আছি।

যদিও বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হলে বিএনপির ওই নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, আমি বিষয়টি আসলে ওভাবে বলিনি। যারা নিরীহ আওয়ামী লীগ তাদেরকে আমি দলে আসতে বলেছি। আর যারা সন্ত্রাস করেছে তাদের ব্যাপারে কোনো ছাড় নাই।

গত ৮ ডিসেম্বর ঘোষিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটিতেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ পদ পেয়েছেন এমনটা দেখা গেছে। নানামুখী হিসাব-নিকাশের পর ঘোষিত ৬১ সদস্যের কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ১৩ জন এবং সদস্য হন ৪৬ জন।

দেখা গেছে, ১৩ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মজিবুর রহমান মজু আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি আফজালুর রহমান বাবুর সহচর। আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপির কর্মসূচি ঠেকাতে তিনি সক্রিয় ছিলেন।

মহানগর দক্ষিণের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, বর্তমানে থানা কমিটি গোছানোর কাজ চলছে। সিভি নেওয়া হচ্ছে। স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগসহ অন্য দলের কাউকে নেওয়া যাবে না। এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বিএনপিতে কর্মীর অভাব নেই। আমাদের নেতা তারেক রহমান আওয়ামী লীগের ওপর হামলা না হয় সেই নির্দেশ দিয়েছেন। যে কারণে আইন হাতে তুলে নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু দলে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিছু ঘটনা ঘটলেও সামনে আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আশা করি পুনরাবৃত্তি হবে না।