ঢাকা ০২:৩২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নতুন বাংলাদেশে ১১২ দিন পর ক্লাস শুরু

  • চেতনায়২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৮:১৯:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ২৩৫ বার পড়া হয়েছে

ছাত্র-জনতার যে প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে, সেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরেছেন।

সাড়ে তিন মাস পর রোববার সকালে বেশিরভাগ বিভাগে ক্লাস হয়েছে। তবে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে।

শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পূরণে ‘পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে’ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেছেন, “নতুন বাংলাদেশে ১১২ দিন পর ক্লাস শুরু হল।

“সামনে বড় মাপের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ক্লাস গ্যাপ পূরণে পরিকল্পনা আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, সেসব নিরসনে কাজ চলছে।”

এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা চেয়ে উপাচার্য বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে। সেসব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয় সব কিছু সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে চলবে।”

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার মধ্যে গত ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেইসঙ্গে খালি করা হয় হলগুলো

 

এরপর ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পরের দিন আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাস খুললেও এতদিন স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম দেখা যায়নি। এর মধ্যে ক্ষমতার পালাবদলে উপাচার্য, প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষ ও ডিনদের পদত্যাগের হিড়িকে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; এসব পদে নতুনদের আনা হয়েছে ধাপে ধাপে।

 

ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন হলে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আসন বণ্টনের কাজও চলছে।

ক্লাসে ফেরার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের ছাত্রী রিজিয়া পারভীন বলেন, “সব বাধা অতিক্রম করে আমরা ক্যাম্পাসে নতুন মুক্ত পরিবেশে সকালে এসেছি। ক্লাস একটা হয়েছে। বেশ ভালো লাগছে।”

সব বিভাগে দ্রুত ক্লাস শুরু হবে বলে আশা করছেন জাপানিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান শামীম।

তিনি বলেন, “সরকার পতনের পর নতুন করে হলে সিট বরাদ্ধ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন পরিবেশ দেখে খুশির আমেজ বয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনেকটা চাপে পড়েছে চতুর্থ ও মাস্টার্স এর শিক্ষার্থীরা।

“অনেক ডিপার্টমেন্টে ক্লাস শুরু হয়েছে আজকে থেকে আবার কিছু ডিপার্টমেন্টে ক্লাস শুরু হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করি দ্রুতই ক্লাস শুরু হবে এবং ক্যাম্পাসের আগের মতো প্রাণবন্ত অবস্থায় ফিরবে।”

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাইশা মালিহা বলেছেন, তাদের বিভাগের ক্লাস শুরু হবে সোমবার থেকে।

এই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, “ভিসি স্যার বলেছিলেন তার প্রধান কাজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা। অবশ্যই আমাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা উচিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোসহ ডিপার্টমেন্টগুলোতে এখনো অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে।”

আবাসন সংকট নিয়ে মালিহা বলেন, “হলগুলোতে প্রথম বর্ষসহ অনাবাসিক অনেক নারী শিক্ষার্থীই বৈধ সিটের দাবিদার। তাদের চাহিদা অনুযায়ী সিটের ব্যবস্থা না করে ক্লাস শুরু করে দেওয়া হলে তাদেরকে আবাসন সংকটে পড়তে হবে।

“বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টগুলোতে নীল দলের শিক্ষকদের অপসারণের যে দাবি উঠেছে, তার মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করে একাডেমিক কার্যক্রমকে পূর্ণ গতিতে সচল করাটা কঠিন হবে।”

তবে প্রশাসনকে নিজস্ব গতিতে কাজ করতে দিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ৮ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমানসহ প্রক্টরিয়াল বডির সবাই পদত্যাগ করেন।

গত ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করলে, নতুন উপাচার্য হন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।

বেগম রোকেয়া হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, শামসুন্নাহার হল, বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষও পদত্যাগ করেন।

এরপর উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে অধ্যাপক নিয়াজ বিশ্ববিদ্যালের হল, বিভাগ, অফিস প্রধান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলোচনা করেন। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ক্লাস শুরুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

নতুন বাংলাদেশে ১১২ দিন পর ক্লাস শুরু

আপডেট সময় : ০৮:১৯:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্র-জনতার যে প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে, সেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরেছেন।

সাড়ে তিন মাস পর রোববার সকালে বেশিরভাগ বিভাগে ক্লাস হয়েছে। তবে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হবে ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে।

শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পূরণে ‘পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে’ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেছেন, “নতুন বাংলাদেশে ১১২ দিন পর ক্লাস শুরু হল।

“সামনে বড় মাপের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ক্লাস গ্যাপ পূরণে পরিকল্পনা আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, সেসব নিরসনে কাজ চলছে।”

এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা চেয়ে উপাচার্য বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে। সেসব কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয় সব কিছু সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে চলবে।”

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার মধ্যে গত ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেইসঙ্গে খালি করা হয় হলগুলো

 

এরপর ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পরের দিন আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাস খুললেও এতদিন স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম দেখা যায়নি। এর মধ্যে ক্ষমতার পালাবদলে উপাচার্য, প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষ ও ডিনদের পদত্যাগের হিড়িকে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; এসব পদে নতুনদের আনা হয়েছে ধাপে ধাপে।

 

ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন হলে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আসন বণ্টনের কাজও চলছে।

ক্লাসে ফেরার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের ছাত্রী রিজিয়া পারভীন বলেন, “সব বাধা অতিক্রম করে আমরা ক্যাম্পাসে নতুন মুক্ত পরিবেশে সকালে এসেছি। ক্লাস একটা হয়েছে। বেশ ভালো লাগছে।”

সব বিভাগে দ্রুত ক্লাস শুরু হবে বলে আশা করছেন জাপানিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান শামীম।

তিনি বলেন, “সরকার পতনের পর নতুন করে হলে সিট বরাদ্ধ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন পরিবেশ দেখে খুশির আমেজ বয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনেকটা চাপে পড়েছে চতুর্থ ও মাস্টার্স এর শিক্ষার্থীরা।

“অনেক ডিপার্টমেন্টে ক্লাস শুরু হয়েছে আজকে থেকে আবার কিছু ডিপার্টমেন্টে ক্লাস শুরু হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আশা করি দ্রুতই ক্লাস শুরু হবে এবং ক্যাম্পাসের আগের মতো প্রাণবন্ত অবস্থায় ফিরবে।”

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মাইশা মালিহা বলেছেন, তাদের বিভাগের ক্লাস শুরু হবে সোমবার থেকে।

এই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, “ভিসি স্যার বলেছিলেন তার প্রধান কাজ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা। অবশ্যই আমাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা উচিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোসহ ডিপার্টমেন্টগুলোতে এখনো অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে।”

আবাসন সংকট নিয়ে মালিহা বলেন, “হলগুলোতে প্রথম বর্ষসহ অনাবাসিক অনেক নারী শিক্ষার্থীই বৈধ সিটের দাবিদার। তাদের চাহিদা অনুযায়ী সিটের ব্যবস্থা না করে ক্লাস শুরু করে দেওয়া হলে তাদেরকে আবাসন সংকটে পড়তে হবে।

“বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টগুলোতে নীল দলের শিক্ষকদের অপসারণের যে দাবি উঠেছে, তার মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যকার সম্পর্ক স্বাভাবিক করে একাডেমিক কার্যক্রমকে পূর্ণ গতিতে সচল করাটা কঠিন হবে।”

তবে প্রশাসনকে নিজস্ব গতিতে কাজ করতে দিতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ৮ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাকসুদুর রহমানসহ প্রক্টরিয়াল বডির সবাই পদত্যাগ করেন।

গত ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল উপাচার্যের পদ থেকে পদত্যাগ করলে, নতুন উপাচার্য হন উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান।

বেগম রোকেয়া হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, শামসুন্নাহার হল, বিজয় একাত্তর হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষও পদত্যাগ করেন।

এরপর উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়ে অধ্যাপক নিয়াজ বিশ্ববিদ্যালের হল, বিভাগ, অফিস প্রধান, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীজনের সাথে আলোচনা করেন। পরে ১৩ সেপ্টেম্বর এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় ক্লাস শুরুর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।