আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিটি) প্রধান প্রসিকিউটর বিশিষ্ট আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেছেন, দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডসহ গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার শুরু হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরিয়েছেন তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, বিচার কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে পরিচালনা করা হবে। এজন্য আইন প্রয়োগ ও সাক্ষ্য-প্রমাণে আধুনিক সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট রেজিমে অপরাধ ট্রাইব্যুনালের যেভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে, আমরা তা করছি না। আমরা আইনের যথাযথ ব্যবহার করছি। হত্যা-নির্যাতন, গুম, অপহরণ ও ধর্ষণের মতো গর্হিত অপরাধকে বিচারের আওতায় আনা হবে।
আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য ট্রাইব্যুনালকে ব্যবহার করেছে। আমরা তা করব না। পলাতক অপরাধীরা সাহস থাকলে দেশে এসে আইনের মুখোমুখি হোক। অন্যথায় তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারের বিধান এই আইনেই আছে।
একান্ত সাক্ষাৎকারে তাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ঢাকার নয়াপল্টনের ভিআইপি রোডে নিজের চেম্বারে সাক্ষাৎকার দেন তাজুল ইসলাম।
তাজুল ইসলাম: আইনজীবীরা কখনো ডিফেন্সে থাকবে, কখনো প্রসিকিউশনে, এটা খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়৷ আমার কাছে যখন যে ক্লায়েন্ট আসেন, কখনো আমি বাদী পক্ষে মামলা করি বা বিবাদী পক্ষে। একজন আইনজীবীর জন্য এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা না। একসময় ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডিফেন্স সাইটে কাজ করেছি। এখন আমাকে প্রসিকিউশন সাইটে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুতরাং এর মধ্যে আমার আলাদা কোনো ফিলিংস নেই। যা আছে তা হচ্ছে দায়িত্বের অনুভূতি। এত বড় একটা গণহত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে সারা বাংলাদেশে, যাদের রক্তের বিনিময়ে, ত্যাগের বিনিময়ে আমরা দেশটা নতুন করে স্বাধীন করলাম। তাদের হত্যার বিচার করাটা রাষ্ট্রের একটা দায়িত্ব। এটা অসম্ভব একটা কঠিন কাজ। সেটাকে সুচারু ও নিরপেক্ষভাবে করা, এটা যেন সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকে। কোনোভাবেই যেন কারও প্রশ্ন তোলার সুযোগ না থাকে। এটা আমাদের জন্য দায়িত্ব। দায়িত্বের একটা গভীর ভার অনুভব করছি এর বাইরে কিছু না।
আমি দায়িত্ব নেওয়ার খুব বেশি দিন হয়নি। ইতিমধ্যে তদন্তকারী সংস্থা তদন্ত করছে। প্রসিকিউশনেরও তদন্ত করার ক্ষমতা আছে। আমরা যে তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি, তাতে এই মামলাগুলোর অপরাধ প্রমাণ করা বা বিচার কাজ করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। কারণ ঘটনা সাম্প্রতিককালের। প্রমাণগুলো চোখের সামনে আছে। আহতরা সাক্ষী হিসেবে আছেন। যারা ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে পুলিশ, বিভিন্ন বাহিনীর লোক, মন্ত্রিপরিষদের লোক, বিভিন্ন দলের লোক, সবাই আছেন। এমন একটা জ্বলজ্যান্ত পরিবেশে যত দ্রুততার সঙ্গে বিচারটা করা যাবে, তত সাকসেসফুল হওয়া যাবে। আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি প্রধান যারা অপরাধী তাদের বিচার করা সম্ভব।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আইন একটাই আছে। আগের সরকার এই আইনের অপপ্রয়োগ করেছে। আমরা সেটার সঠিক ব্যবহার করব। ন্যায়বিচার করার জন্য ট্রাইব্যুনালকে আইনেই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে এটা জজ সাহেবরা নিশ্চিত করতে পারবেন। ডিজিটাল প্রমাণগুলোকে আমরা আদালতে প্রমান করার ব্যবস্থা করব।