বিগত আওয়ামী সরকারের শাসনামলে সম্পদের পাহাড় গড়া চন্দ্রবিন্দু ফ্যাশন হাউজের স্বত্তাধিকারী আবুল কালাম আজাদ অবশেষে পুলিশের খাঁচায় বন্দী হয়েছে। নগরীর প্যারারা রোড থেকে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, বরিশালে রাজনৈতিক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার আদালতে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন
চন্দ্রবিন্দুর মালিক কে এই কালাম?
বাকেরগঞ্জের কবাই ইউনিয়নের বাসিন্দা দিনমজুর আব্দুল খালেকের পুত্র হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের ১৫ বছরে অগাধ বিত্তবৈভবের মালিক বনে যাওয়া আবুল কালাম (আজাদ)। কালামের পিতা ছিলেন নৌকার মাঝি। বাকেরগঞ্জের নৌকায় খেয়া পারাপার করতেন, আবার কখনো দিনমজুরের কাজ করতেন খালেক। দিনমজুরের পুত্র আজাদের অবৈধপন্থায় শত শত কোটি কোটি মালিক বনে যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন ধুমায়িত হচ্ছে। বরিশাল, ঢাকাসহ সারাদেশে চন্দ্রবিন্দু ফ্যাশন হাউজের ২৬টি আউটলেট গড়ে তুলেছেন তিনি। দেশের বিভিন্নস্থানে নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।
দিনমজুরের পুত্র কালাম ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে সরকারী সম্পত্তি ও অসংখ্য লোকের একরে একরে সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে বরিশালের বাকেরগঞ্জের কবাই ইউনিয়নে গড়ে তুলেছেন চন্দ্রবিন্দু কমপ্লেক্স, বাগান বাড়ি, এগ্রো ফার্ম সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আ’লীগ শাসনামলে কালাম বাহিনীর দখল সন্ত্রাসে অতিষ্ঠ ছিল কবাই ও আশপাশ এলাকার শান্তিপ্রিয় নারী-পুরুষ। স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অব্যাহত হয়রানি ও নির্যাতন করে এলাকা ছাড়াও করেছিলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা কালাম। দখল সন্ত্রাস ও দুর্নীতিতে বেপরোয়া বাকেরগঞ্জের পৌরমেয়র আওয়ামী লীগ নেতা লোকমান হোসেন ডাকুয়ার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এই কালাম। আর এ কারণেই কালাম আ’লীগ সরকারের শাসনামলে যতই দখল সন্ত্রাসের জন্ম দিতো, কখনোই তাকে পিছু হটতে হয়নি। কেউ প্রতিবাদ করলে তার আর রক্ষা ছিলনা। প্রতিবাদীকারী ব্যক্তি ও পরিবারবর্গের উপর বিভিন্ন কায়দায় চালানো হতো নির্যাতন ও হয়রানি। সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলায় ঢুকিয়ে দিয়ে হয়রানি করতো।
২০২২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর অন্যের জমি জবর দখল করতে চন্দ্রবিন্দুর স্বত্তাধিকারী আবুল কালামের বিরুদ্ধে নিজের মার্কেটে ভেঙে বিএনপি নেতা ও তার পরিবারের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করেছিলেন। কবাই ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল কুদ্দুসের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করেন। এ নিয়ে বিএনপি নেতা কুদ্দুস প্রতিবাদ করলে দফায় দফায় তার পরিবারের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়।
ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা আব্দুল কুদ্দুস মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে কবাই ইউনিয়নে অসংখ্য মানুষের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে চন্দ্রবিন্দু কমপ্লেক্স সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করেন আবুল কালাম আজাদ। আমার দান করা মসজিদের সম্পত্তি দখল করেছেন তিনি। এছাড়া নদীর জায়গা, চন্দ্রবিন্দুর কমপ্লেক্সের সামনে সিএন্ডবি সম্পত্তি, শিয়ালগনি মৌজায় শহিদ চৌধুরী দেড় একর সম্পত্তি সহ অনেক লোকের সম্পত্তি জবরদখল করেছেন।
তিনি বলেন, বাকেরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা কালামের দখল সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করায় ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পরিকল্পিতভাবে তার বসতঘরে জাল টাকা, অস্ত্র ও মাদক রেখে তার পুত্র মেহেদী হাসান শৈশবকে গ্রেফতার করানো হয়। ওই মামলায় আমাকেও আসামি করা হয়।
ভুক্তভোগী শহিদ চৌধুরী বলেন, গত আ’লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার দাপটে আমার দেড় একর সম্পত্তি সহ অনেক লোকের সম্পত্তি জবরদখল করেছেন চন্দ্রবিন্দুর মালিক আবুল কালাম আজাদ। তৎকালীন সময়ে এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে আমরা কালামের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। তিনি বলেন, কালাম অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি আমরা।
বাকেরগঞ্জের একাধিক বিএনপি নেতারা বলেন, আবুল কালামের অর্থের উৎস নিয়ে বিভিন্নমহলে নানাজনে নানা কথা বলছে। রীতিমতো অবাক হওয়ার মতো কালামের বিপুল পরিমাণ সম্পদের বিষয়টি। আ’লীগ সরকারের আমলে কবাই ইউনিয়নে আমাদের দলীয় নেতাদের ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগ রয়েছে কালামের বিরুদ্ধে। এছাড়া বিভিন্ন জনের সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করে চন্দ্রবিন্দু কমপ্লেক্স করারও অভিযোগ রয়েছে।