মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা, হুন্ডি কার্যক্রম ও স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে ছয়জনের পরিচয় উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিআইডি। আজ বুধবার (১ অক্টোবর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাজধানীর কোতয়ালী থানায় এ মামলা করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাস, ওয়াহিদুজ্জামান, মো. গোলাম সারওয়ার আজাদ, মো. তরিকুল ইসলাম ওরফে রিপন ফকির, রাজীব সরদার ও উজ্জ্বল কুমার সাধু।
সিআইডি জানায়, একজন মার্কিন নাগরিক প্রতারিত হওয়ার পর আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে সহযোগিতা চেয়ে যোগাযোগ করে। সেই সূত্র ধরে সিআইডি অনুসন্ধান কাজ শুরু করে। সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে আসে মার্কিন নাগরিক ডেবোরাহ জন্সটন রামলো ‘ডেবি’র সঙ্গে এই প্রতারকচক্র বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে সখ্যতা গড়ে তোলে।
অভিযোগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতারকচক্র তাদেরকে ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির (ডিইএ) পরিচয় দিয়ে দুই লাখ ২২ হাজার মার্কিন ডলার (যা বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার ৩৫১ টাকা) আত্মসাৎ করে। এই অর্থ প্রতারকচক্র ছল-চাতুরী ও ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে আমেরিকার ভুক্তভোগী নাগরিককে বাধ্য করে যেন তিনি আমেরিকায় অবস্থিত বিভিন্ন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নিকট এই টাকা পাঠায়। এ প্রতারক চক্রের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের থেকে বিভিন্ন নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা গ্রহণ করে। তারা এ প্রতারণা ছাড়াও এভাবে দীর্ঘদিন ধরে হুন্ডি কার্যক্রম ব্যবসা করতো।
সিআইডি জানায়, এই সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্যরা প্রতারণা ও হুন্ডি ব্যবসার টাকা নামসর্বস্ব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দীর্ঘদিন ধরে লেনদেন করে আসছে। নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আইনক্স ফ্যাশন, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, জামান এন্টারপ্রাইজ ও নোহা এন্টারপ্রাইজ। এর মধ্যে আইনক্স ফ্যাশনের নামে ইউসিবিএলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজের নামে ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও এনআরবিসি ব্যাংকে পৃথক চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে। পাশাপাশি জামান এন্টারপ্রাইজের নামে ব্র্যাক ব্যাংকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং নোহা এন্টারপ্রাইজের নামে সাউথ-ইস্ট ব্যাংকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ আয়-বহির্ভূত লেনদেনের রেকর্ড রয়েছে। এছাড়াও মামলায় অভিযুক্ত মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাস নামীয় অ্যাকাউন্টেও অবৈধ লেনদেনের তথ্য উঠে এসেছে।
মার্কিন নাগরিকের প্রতারিত হওয়ার ঘটনায় সিআইডি অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানতে পারে, স্বর্ণ চোরাচালান কারবারের সঙ্গে এ চক্রের সদস্যরা জড়িত। তারা বিশেষ যোগাযোগের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে আসা ব্যক্তিদের নিকট থেকে ও ঢাকার তাঁতীবাজারসহ অন্যান্য স্থানের বিভিন্ন দোকানে ভাঙ্গারি স্বর্ণ সংগ্রহ করে তা গলিয়ে পাকা সোনার বার বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পাচার করে আসছে। এসব পাচারকৃত সোনার বার মূলত সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হতো।
মামলার পূর্ণ রহস্য এবং অজ্ঞাতনামা অন্যান্য আসামিদের নাম ঠিকানা উদঘাটন ও শনাক্তপূর্বক সব আসামিকে আইনের আওতায় আনার জন্য মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।