জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনে অংশগ্রহণ শেষে ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কে প্রায় ১০ দিনের কূটনৈতিক কর্মসূচি শেষে তিনি আজ দেশে ফিরছেন। এই সফরে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করেছেন, তুলে ধরেছেন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক রূপরেখা।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা ১০ মিনিটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী, বুধবার (১ অক্টোবর) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে তিনি নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন।
বিদায়ের সময় তাকে বিদায় জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক মো. আরিফুল ইসলাম।
গত ২২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১টা ৪০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন প্রধান উপদেষ্টা। তার সঙ্গে সফরে ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা। এটি ছিল তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সফর, যেখানে তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার ইস্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সফরকালে তিনি নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত এবং ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সার্জিও গোর-এর সঙ্গে বৈঠক করেন। এছাড়া তিনি নিউইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গভীর সমবেদনা জানান।
জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ‘সোশ্যাল বিজনেস, ইয়ুথ অ্যান্ড টেকনোলজি’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের এক সাইড ইভেন্টে তিনি বক্তব্য রাখেন। পাশাপাশি জাতিসংঘের মূল সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভাষণ দেন। সেখানে তিনি দেশের রাজনৈতিক অগ্রগতি, সামাজিক উদ্যোগ এবং প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরেন।
সফরকালে বিশ্বের ১১টি দেশের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাবেক ও বর্তমান প্রধানদের সঙ্গে তার একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এসব বৈঠকে বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক সংস্কার ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানান তারা।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হয়। সেখানে মহাসচিব বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি প্রকাশ করেন। ড. ইউনূস জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন নিয়মিত বাংলাদেশ সফর করে চলমান রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে।
এই সফরের শেষ দিনে তিনি জাতিসংঘ সদর দফতরে আয়োজিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ বিষয়ক উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত ও টেকসই সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।