ঢাকা ০২:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আমর ইবনে সাঈদ (রা.) বিশ্বনবীর ঐতিহাসিক আংটির নকশাকার

  • চেতনায়২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৯:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫
  • ২২৮ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বনবী (সা.)-এর বিশ্বস্ত সাহাবি আমর ইবনে সাঈদ ইবনে আস (রা.), মহান আল্লাহ যাকে হাবশা ও মদিনায় হিজরতকারী সাহাবি হিসেবে কবুল করেছিলেন। তিনি ছিলেন কুরাইশ গোত্রের উমাইয়া শাখার সন্তান। মা সাফিয়া বিনতে মুগীরা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে মাখযূম। তিনি ছিলেন মাখযূম গোত্রের কন্যা এবং বীর সাহাবি হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর ফুফু। সেই হিসেবে আমর ইবনে সাঈদ ইবনে আস (রা.) ছিলেন বীর সাহাবি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর ফুফাতো ভাই।

ইসলাম ও হিজরত
ভাই খালিদের ইসলাম গ্রহণের কিছুকাল পর হজরত আমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। ইবনে সাদ (রহ.)-এর বর্ণনায় আছে, ভাই খালিদের হিজরতের দুই বছর পর আমর (রা.) স্ত্রী ফাতিমা বিনতে সফওয়ান আল-কিনানিয়াসহ হাবশায় হিজরত করেন। সেখানে দুই ভাই দীর্ঘ সময় অন্যান্য মুহাজিরদের সঙ্গে অবস্থান করেন।

এরপর ৭ হিজরিতে তাঁরা মদিনায় হিজরত করেন। তখন খাইবারের যুদ্ধ চলছিল। খাইবারে গিয়ে তাঁরা রাসুল (সা.)-এর সাক্ষাত্ লাভ করেন। বালাযুরী (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁদেরকেও খাইবারের গনীমত থেকে অংশ দেন। উল্লেখ্য, সে সময় হাবশা থেকে অনেক সাহাবি মদিনায় হিজরত করেছিলেন। রাসুল (সা.) নাজাশীর কাছে হজরত আমর ইবনে উমাইয়া আয-যমরী (রা.)-কে পাঠান তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য। তখন নাজাশী রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ পালনে দুটি নৌযানে বেশ কয়েকজন মুহাজির সাহাবিকে মদিনায় পাঠান। (আল-ইসতিআব : ৩/১১৭৭, উসদুল গাবাহ : ৩/৭২৭-৭২৮, আনসাবুল আশরাফ : ৫/৪৩১, আত-ত্বাবাকাতুল কুবরা : ৪/৭৬)

যেভাবে আমর ইবনে সাঈদের আংটি রাসুল (সা.)-এর সিলমোহর হলো
আমর ইবনে সাঈদ ইবনে আস (রা.) ছিলেন খুবই সৃজনশীল। তাই বিশ্বনবী (সা.)-কে ভালোবেসে তিনি তাঁর নাম সম্বলিত একটি আংটি তৈরি করে ব্যবহার করতে শুরু করেন। একদিন রাসুল (সা.) আমর (রা.)-এর হাতে সেই আংটি দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমর, এটি কী?’ তিনি বললেন, ‘একটি আংটি, নিজের জন্য বানিয়েছি।’

রাসুল (সা.) বললেন, ‘এর নকশায় কী লিখেছ?’ তিনি বললেন, ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। আংটিটি রাসুল (সা.)-এর পছন্দ হলো। তিনি তা নিজের সিলমোহর হিসেবে গ্রহণ করলেন। মৃত্যু পর্যন্ত এটি তাঁর হাতে ছিল। পরে তা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খলিফার হাতে ছিল এবং চিঠিপত্রে সিলমোহর হিসেবে ব্যবহূত হতো।

তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.)-এর খেলাফতের সময়ে আংটিটি ‘আরিস’ নামক কূপে হারিয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও আর উদ্ধার করা যায়নি। ইন্নালিল্লাহ…! (আল-ইসতিআব : ৩/১১৭৮)

জিহাদে অংশগ্রহণ ও শাহাদাত
আমর ইবনে সাঈদ (রা.) মদিনায় হিজরতের পর অবশিষ্ট জীবন রাসুল (সা.)-এর সান্নিধ্যে কাটান। তিনি মক্কা বিজয়, হুনাইন, তায়িফ ও তাবুক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। রাসুল (সা.) তাঁকে বিভিন্ন এলাকায় আমেল হিসেবে পাঠান, যেমন: তাবুক, খাইবার ও ফিদাক।

১৩ হিজরির জুমাদাল উলা মাসে সিরিয়ায় আজনাদাইন যুদ্ধে তিনি ভাই আবানের সঙ্গে যোগ দেন এবং উভয়েই শাহাদাতবরণ করেন। এ মতই অধিকাংশ আলেমের। (আল-ইসতিআব : ৩/১১৭৭-১১৭৮, উসদুল গাবাহ : ৩/৭২৮, আত-ত্বাবাকাতুল কুবরা : ৪/৭৬)

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

আমর ইবনে সাঈদ (রা.) বিশ্বনবীর ঐতিহাসিক আংটির নকশাকার

আপডেট সময় : ০৮:৩৯:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ অগাস্ট ২০২৫

বিশ্বনবী (সা.)-এর বিশ্বস্ত সাহাবি আমর ইবনে সাঈদ ইবনে আস (রা.), মহান আল্লাহ যাকে হাবশা ও মদিনায় হিজরতকারী সাহাবি হিসেবে কবুল করেছিলেন। তিনি ছিলেন কুরাইশ গোত্রের উমাইয়া শাখার সন্তান। মা সাফিয়া বিনতে মুগীরা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে মাখযূম। তিনি ছিলেন মাখযূম গোত্রের কন্যা এবং বীর সাহাবি হজরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর ফুফু। সেই হিসেবে আমর ইবনে সাঈদ ইবনে আস (রা.) ছিলেন বীর সাহাবি খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর ফুফাতো ভাই।

ইসলাম ও হিজরত
ভাই খালিদের ইসলাম গ্রহণের কিছুকাল পর হজরত আমর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেন। ইবনে সাদ (রহ.)-এর বর্ণনায় আছে, ভাই খালিদের হিজরতের দুই বছর পর আমর (রা.) স্ত্রী ফাতিমা বিনতে সফওয়ান আল-কিনানিয়াসহ হাবশায় হিজরত করেন। সেখানে দুই ভাই দীর্ঘ সময় অন্যান্য মুহাজিরদের সঙ্গে অবস্থান করেন।

এরপর ৭ হিজরিতে তাঁরা মদিনায় হিজরত করেন। তখন খাইবারের যুদ্ধ চলছিল। খাইবারে গিয়ে তাঁরা রাসুল (সা.)-এর সাক্ষাত্ লাভ করেন। বালাযুরী (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করে তাঁদেরকেও খাইবারের গনীমত থেকে অংশ দেন। উল্লেখ্য, সে সময় হাবশা থেকে অনেক সাহাবি মদিনায় হিজরত করেছিলেন। রাসুল (সা.) নাজাশীর কাছে হজরত আমর ইবনে উমাইয়া আয-যমরী (রা.)-কে পাঠান তাঁদের ফিরিয়ে আনার জন্য। তখন নাজাশী রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ পালনে দুটি নৌযানে বেশ কয়েকজন মুহাজির সাহাবিকে মদিনায় পাঠান। (আল-ইসতিআব : ৩/১১৭৭, উসদুল গাবাহ : ৩/৭২৭-৭২৮, আনসাবুল আশরাফ : ৫/৪৩১, আত-ত্বাবাকাতুল কুবরা : ৪/৭৬)

যেভাবে আমর ইবনে সাঈদের আংটি রাসুল (সা.)-এর সিলমোহর হলো
আমর ইবনে সাঈদ ইবনে আস (রা.) ছিলেন খুবই সৃজনশীল। তাই বিশ্বনবী (সা.)-কে ভালোবেসে তিনি তাঁর নাম সম্বলিত একটি আংটি তৈরি করে ব্যবহার করতে শুরু করেন। একদিন রাসুল (সা.) আমর (রা.)-এর হাতে সেই আংটি দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমর, এটি কী?’ তিনি বললেন, ‘একটি আংটি, নিজের জন্য বানিয়েছি।’

রাসুল (সা.) বললেন, ‘এর নকশায় কী লিখেছ?’ তিনি বললেন, ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। আংটিটি রাসুল (সা.)-এর পছন্দ হলো। তিনি তা নিজের সিলমোহর হিসেবে গ্রহণ করলেন। মৃত্যু পর্যন্ত এটি তাঁর হাতে ছিল। পরে তা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খলিফার হাতে ছিল এবং চিঠিপত্রে সিলমোহর হিসেবে ব্যবহূত হতো।

তৃতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.)-এর খেলাফতের সময়ে আংটিটি ‘আরিস’ নামক কূপে হারিয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও আর উদ্ধার করা যায়নি। ইন্নালিল্লাহ…! (আল-ইসতিআব : ৩/১১৭৮)

জিহাদে অংশগ্রহণ ও শাহাদাত
আমর ইবনে সাঈদ (রা.) মদিনায় হিজরতের পর অবশিষ্ট জীবন রাসুল (সা.)-এর সান্নিধ্যে কাটান। তিনি মক্কা বিজয়, হুনাইন, তায়িফ ও তাবুক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। রাসুল (সা.) তাঁকে বিভিন্ন এলাকায় আমেল হিসেবে পাঠান, যেমন: তাবুক, খাইবার ও ফিদাক।

১৩ হিজরির জুমাদাল উলা মাসে সিরিয়ায় আজনাদাইন যুদ্ধে তিনি ভাই আবানের সঙ্গে যোগ দেন এবং উভয়েই শাহাদাতবরণ করেন। এ মতই অধিকাংশ আলেমের। (আল-ইসতিআব : ৩/১১৭৭-১১৭৮, উসদুল গাবাহ : ৩/৭২৮, আত-ত্বাবাকাতুল কুবরা : ৪/৭৬)