ঢাকা ০২:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক বাজার হারাচ্ছে কাঁচাপাট

  • চেতনায়২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১০:৩৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫
  • ২২৬ বার পড়া হয়েছে

আন্তর্জাতিক বাজার হারাতে বসেছে কাঁচাপাট। এক সময় ২৯টি দেশে রপ্তানি হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২টি দেশে। কমেছে রপ্তানির পরিমাণও।

মূলত, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ও রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশের বাজার হারাচ্ছে পাট। ফলে রপ্তানিকারকরা যেমন আর্থিকভাবে লোকসানের সম্মুখীন, তেমনই ব্যাংকের ঋণ খেলাপিও হয়েছেন। এসব কারণে দেশের অন্যতম কাঁচাপাটের মোকাম খুলনার দৌলতপুরে মন্দাভাব বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশন ও পাট অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে ভারত, পাকিস্তান, চীন, ইতালি, রাশিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ইরান, নেপাল, স্পেন, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ২৯টি দেশে পাট রপ্তানি হয়েছে। অথচ, বিদায়ী অর্থবছরে ১২টি দেশে রপ্তানি হয়।

যে ১৭ দেশের বাজার হারিয়েছে কাঁচাপাট: বেলজিয়াম, কিউবা, মিশর, এল-সালভাডোর, ইথিওপিয়া, জার্মানি, হল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, তানজানিয়া, জায়ার, রোমানিয়া ও ফিলিপাইন।

যে ১২ দেশে রপ্তানি হচ্ছে : ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ব্রাজিল, ইউকে, ভিয়েতনাম, তিউনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, আইভরি কোস্ট, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র।

পাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ, দফায় দফায় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, করোনা, ডলারের মূল্য উঠানামা বিশ্ব বাজার হারানোর অন্যতম কারণ।

কমেছে রপ্তানি:
২০১০-২০১১ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২১ লাখ ১২ হাজার ৪০০ বেল পাট রপ্তানি হয়। যা থেকে আয় ছিল ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। গেল ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ১ হাজার ৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা মূল্যের ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৯ বেল পাট রপ্তানি হয়েছে।

পাটের বাজার হারানোর বিষয়ে গাজী জুট ইন্টারন্যাশনালের রপ্তানিকারক গাজী শরিফুল ইসলাম বলেন, উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মানসম্মত পাট আমাদের দেশে হয়। এই পাট রপ্তানিতে বিভিন্ন সময়ে বাঁধা আসে। ২০০৯-২০১০ সালের পর দুই-তিন দফায় পাট রপ্তানি বন্ধ হয়। যেসব দেশ বাংলাদেশের পাটে নির্ভরশীল, রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় সেসব দেশের মিলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে পাটের বাজার কমেছে।

তিনি আরো বলেন, আগে সড়কপথে ভারতে পাট যেত। বর্তমানে জলপথে জাহাজের মাধ্যমে যায়। ফলে পাট পাঠাতে সময় ও ব্যয় বেড়েছে। অবশ্য এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। কয়েকগুণ খরচ বেড়েছে তাদের।

দৌলতপুর সারতাজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের রপ্তানিকারক বদরুল আলম মার্কিন বলেন, বাজারে চাহিদা কমেছে। বিভিন্ন দেশের মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রপ্তানির কমছে। ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে পাট রপ্তানি করি। বর্তমানে এই তিনটি দেশ পাটের সবচেয়ে বড় বাজার।

বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েনের (বিজেএ) চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ আকন্দ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের শুরু থেকে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। রপ্তানির শুরুর পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে রপ্তানি বন্ধের সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বাহিরের দেশের মিলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য বাজার কিছুটা হারিয়েছি এবং রপ্তানিও কমেছে। তবে বাজার সৃষ্টি করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞা:
গত ২৭ জুন ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক প্রজ্ঞাপনে ভারতের সমস্ত স্থলবন্দরে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় কাঁচাপাট, পাটের রোল, পাটের সুতা, বোনা কাপড়, সুতার পণ্যসহ ৯ ধরনের পাটপণ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে এ-ও উল্লেখ আছে যে, সব স্থলবন্দর বন্ধ করা হলেও মহারাষ্ট্রের নহাভা শেভা সমুদ্রবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য ভারতে আমদানি করা যাবে। এছাড়াও ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে যাওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। তবে, এই পণ্যগুলো নেপাল বা ভুটান থেকে পুনরায় ভারতে রপ্তানি করা যাবে না। তাদের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের কৃষক, কাঁচাপাট রপ্তানিকারক ও ভারতের কলকাতার ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ১২টি দেশে কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছিল।এর মধ্যে ভারতেই সবচেয়ে বেশি পাট রপ্তানি হয়েছে। এরপর নেপাল, পাকিস্তান, আইভরি কোস্ট, চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি হয়েছে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ ও খুলনার প্রায় ২৫ জন ব্যবসায়ী কাঁচাপাট রপ্তানির সঙ্গে জড়িত।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

আন্তর্জাতিক বাজার হারাচ্ছে কাঁচাপাট

আপডেট সময় : ১০:৩৮:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫

আন্তর্জাতিক বাজার হারাতে বসেছে কাঁচাপাট। এক সময় ২৯টি দেশে রপ্তানি হলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১২টি দেশে। কমেছে রপ্তানির পরিমাণও।

মূলত, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ও রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন কারণে বিদেশের বাজার হারাচ্ছে পাট। ফলে রপ্তানিকারকরা যেমন আর্থিকভাবে লোকসানের সম্মুখীন, তেমনই ব্যাংকের ঋণ খেলাপিও হয়েছেন। এসব কারণে দেশের অন্যতম কাঁচাপাটের মোকাম খুলনার দৌলতপুরে মন্দাভাব বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েশন ও পাট অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে ভারত, পাকিস্তান, চীন, ইতালি, রাশিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, ইরান, নেপাল, স্পেন, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ২৯টি দেশে পাট রপ্তানি হয়েছে। অথচ, বিদায়ী অর্থবছরে ১২টি দেশে রপ্তানি হয়।

যে ১৭ দেশের বাজার হারিয়েছে কাঁচাপাট: বেলজিয়াম, কিউবা, মিশর, এল-সালভাডোর, ইথিওপিয়া, জার্মানি, হল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, তানজানিয়া, জায়ার, রোমানিয়া ও ফিলিপাইন।

যে ১২ দেশে রপ্তানি হচ্ছে : ভারত, পাকিস্তান, চীন, নেপাল, ব্রাজিল, ইউকে, ভিয়েতনাম, তিউনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, আইভরি কোস্ট, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র।

পাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ, দফায় দফায় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, করোনা, ডলারের মূল্য উঠানামা বিশ্ব বাজার হারানোর অন্যতম কারণ।

কমেছে রপ্তানি:
২০১০-২০১১ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২১ লাখ ১২ হাজার ৪০০ বেল পাট রপ্তানি হয়। যা থেকে আয় ছিল ১ হাজার ৯০৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। গেল ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ১ হাজার ৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা মূল্যের ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৯ বেল পাট রপ্তানি হয়েছে।

পাটের বাজার হারানোর বিষয়ে গাজী জুট ইন্টারন্যাশনালের রপ্তানিকারক গাজী শরিফুল ইসলাম বলেন, উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মানসম্মত পাট আমাদের দেশে হয়। এই পাট রপ্তানিতে বিভিন্ন সময়ে বাঁধা আসে। ২০০৯-২০১০ সালের পর দুই-তিন দফায় পাট রপ্তানি বন্ধ হয়। যেসব দেশ বাংলাদেশের পাটে নির্ভরশীল, রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় সেসব দেশের মিলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে পাটের বাজার কমেছে।

তিনি আরো বলেন, আগে সড়কপথে ভারতে পাট যেত। বর্তমানে জলপথে জাহাজের মাধ্যমে যায়। ফলে পাট পাঠাতে সময় ও ব্যয় বেড়েছে। অবশ্য এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভারতের ব্যবসায়ীরা। কয়েকগুণ খরচ বেড়েছে তাদের।

দৌলতপুর সারতাজ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের রপ্তানিকারক বদরুল আলম মার্কিন বলেন, বাজারে চাহিদা কমেছে। বিভিন্ন দেশের মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রপ্তানির কমছে। ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে পাট রপ্তানি করি। বর্তমানে এই তিনটি দেশ পাটের সবচেয়ে বড় বাজার।

বাংলাদেশ জুট এ্যাসোসিয়েনের (বিজেএ) চেয়ারম্যান ফরহাদ আহমেদ আকন্দ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের শুরু থেকে রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। রপ্তানির শুরুর পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে রপ্তানি বন্ধের সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বাহিরের দেশের মিলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য বাজার কিছুটা হারিয়েছি এবং রপ্তানিও কমেছে। তবে বাজার সৃষ্টি করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞা:
গত ২৭ জুন ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক প্রজ্ঞাপনে ভারতের সমস্ত স্থলবন্দরে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় কাঁচাপাট, পাটের রোল, পাটের সুতা, বোনা কাপড়, সুতার পণ্যসহ ৯ ধরনের পাটপণ্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে এ-ও উল্লেখ আছে যে, সব স্থলবন্দর বন্ধ করা হলেও মহারাষ্ট্রের নহাভা শেভা সমুদ্রবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্য ভারতে আমদানি করা যাবে। এছাড়াও ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটানে যাওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। তবে, এই পণ্যগুলো নেপাল বা ভুটান থেকে পুনরায় ভারতে রপ্তানি করা যাবে না। তাদের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের কৃষক, কাঁচাপাট রপ্তানিকারক ও ভারতের কলকাতার ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

ব্যবসায়ীরা জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ১২টি দেশে কাঁচাপাট রপ্তানি হয়েছিল।এর মধ্যে ভারতেই সবচেয়ে বেশি পাট রপ্তানি হয়েছে। এরপর নেপাল, পাকিস্তান, আইভরি কোস্ট, চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি হয়েছে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ ও খুলনার প্রায় ২৫ জন ব্যবসায়ী কাঁচাপাট রপ্তানির সঙ্গে জড়িত।