ঢাকা ০২:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আরিচা ঘাটে স্বর্ণ ছিনতাকারীদের ‘দাপট’

  • চেতনায়২৪ ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ১০:৩৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫
  • ২২২ বার পড়া হয়েছে

মানিকগঞ্জের আরিচা স্পিডবোট ঘাটে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এখন ভয়ে-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। যাত্রী পরিবহণের কেন্দ্রস্থলটি পরিণত হয়েছে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের নিরাপদ ঘাঁটিতে। গত দুই বছরে এখানে একের পর এক স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত খোয়া গেছে ১৩৫ ভরি স্বর্ণ। অথচ উদ্ধার হয়নি কিছুই। রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে বলীয়ান চক্রের দাপটে ঘাটজুড়ে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

আরিচা স্পিডবোট ঘাট থেকে গত ১৩ আগস্ট সিংগাইরের গোবিন্দল বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমানের কাছ থেকে পাঁচ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই হয়। তিনি স্বর্ণ নিয়ে পাবনার ঈশ্বরদী যাচ্ছিলেন। আরিচা স্পিডবোট ঘাটে পৌঁছামাত্র সংঘবদ্ধ চক্র তার কাছ থেকে স্বর্ণ ছিনতাই করে বীরদর্পে চলে যায়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঘাট এলাকার সাজাহান, সজল ও ইসরাফিল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হলেও মূল হোতা খোকন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, স্বর্ণ ছিনতাইকারীরা পেশায় কেউ সিএনজি ও ট্রাক চালক। তবে এরা আগে থেকে ঘাট এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে সম্পৃক্ত ছিল। আটক এক ছিনতাইকারী স্থানীয় এক বিএনপি নেতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তাই খোয়া যাওয়া স্বর্ণ থেকে এক আনা স্বর্ণও উদ্ধার হয়নি বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।

১ জুন ২০২৪ : সিংগাইরে নবাবগঞ্জের সুমন বৈদ্য নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ করে ৯৫ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই করা হয়। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা।

জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে ঢাকার দোহারের জয়পাড়া বাজারের ‘নির্ঝর অলঙ্কার নিকেতন’-এর মালিক সুমন বৈদ্য ৯৫ ভরি স্বর্ণ বিক্রির জন্য অটোরিকশা করে সিংগাইরের চারিগ্রাম বাজারে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন ও অটোরিকশাচালক ছিলেন। নবাবগঞ্জের নয়নশ্রী থেকে র‌্যাবের স্টিকারযুক্ত একটি মাইক্রোবাস তাদের পিছু নেয়। অটোরিকশা আমতলা গ্রামে পৌঁছালে মাইক্রোবাস থেকে পাঁচজন নেমে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে তাদের তিনজনকে গাড়িতে তোলে।

এরপর তাদের চোখ-মুখ বেঁধে স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়। গাড়িটি আমতলা বাজার অতিক্রমের সময় যানজটে আটকা পড়ে। এসময় গাড়ি থেকে চিৎকার দেন ওই তিনজন। স্থানীয়রা ভেতরে তিনজনকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখে গাড়িটি ঘিরে ধরেন। পরিস্থিতি বুঝে একজন স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যায়। বাকি পাঁচজনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে ৪৮ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা গেলেও মূল হোতারা আড়ালেই থেকে যায়।

১৬ জুলাই ২০২৪ : সিংগাইরের গোবিন্দলের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ৭০ ভরি স্বর্ণের সাতটি বার নিয়ে আরিচা স্পিডবোট ঘাট হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী যাচ্ছিলেন। শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাসের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা তাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে ওই স্বর্ণ লুট করে এবং দিনভর তাকে আটকে রেখে।

উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি অসিয়ার রহমান সিকো ছিলেন স্বর্ণ লুটের মূল হোতা। পুলিশ ওই স্বর্ণ আর উদ্ধার করতে পারেনি। তবে তৎকালীন মানিকগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ, ঘিওর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জনি ও সিংগাইর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সায়েদুল ইসলাম ছিনতাইকারীদের আড়ালে রেখে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ‘আপস মীমাংসা’ করে নেন। সেই স্বর্ণ শেষ পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি।

১৮ অক্টোবর ২০২৪ : সিংগাইরের গোবিন্দল জামটি বাজারের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কর্মচারী ওসমান গনী চুয়াডাঙ্গায় ৬০ ভরি স্বর্ণ পৌঁছে দিতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। ঘটনার দিন সকালে সিএনজি করে সিংগাইর হয়ে মানিকগঞ্জ থেকে আরিচাঘাটের পথে রওনা দেন ওসমান গনী। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য অভিযুক্ত মো. নুর নবী পূর্বপরিচয় থাকার সুবাদে মোবাইল ফোনে স্বর্ণ বহনকারী ওসমানকে শিবালয়ের উথুলী বাসস্ট্যান্ডে নামতে বলেন। ওসমান ও নুর নবী সেখানে একটি হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করেন।

খাওয়া শেষে ওসমানগনী (স্বর্ণসহ) রিকশা করে আরিচা ঘাটে রওয়ানা দেন। রিকশাটি মহাসড়কের বোয়ালী বড় ব্রিজের কাছে পৌঁছলে মোটরসাইকেলে আসা তিন ব্যক্তি নিজেদের ডিবি পুলিশ দাবি করে ওসমানকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছে থাকা স্বর্ণ অবৈধ বলে অভিযোগ করে। একপর্যায়ে ৬০ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে তারা আরিচার দিকে চম্পট দেয়। পরে শিবালয় থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযুক্ত মো. নুর নবীকে চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও কোনো স্বর্ণ উদ্ধার হয়নি।

৪ মে ২০২৫ : শুধু আরিচা নয়, মানিকগঞ্জের ছিনতাইকারীরা সীমান্তবর্তী জেলাতেও সক্রিয়। চলতি বছরের ৪ মে দুপুরে সিংগাইরের জয়মন্টপ গ্রামের সুনিল ঘোষের ছেলে শুভ ঘোষকে (৩২) ১ কেজি ১৯২ গ্রাম ওজনের ১০টি স্বর্ণের বারসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আটক স্বর্ণের বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আরিচাঘাট হয়ে শুভ ঘোষ স্বর্ণ নিয়ে ভারতে পাচারকালে যশোরের শার্শায় বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

ভুক্তভোগীরা জানান, শুভ ঘোষ একজন পেশাদারি স্বর্ণ পাচারকারী দলের সদস্য। শুভ ঘোষ সিংগাইরের জয়মন্টপ গ্রামের বাসিন্দা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি মনোরঞ্জন ঘোষের আপন ভাতিজা। শুভ দীর্ঘদিন ধরেই চাচার ক্ষমতার ওপর ভর করে দেদারসে স্বর্ণ পাচার করে আসছিলেন।

ভুক্তভোগী স্বর্ণ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, “আমার কাছ থেকে ৭০ ভরি স্বর্ণ লুট হলেও এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কোনো স্বর্ণ উদ্ধার হয়নি। আর ছিনতাইকারী কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বরং তৎকালীন দলীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছে।”

সর্বশেষ ভুক্তভোগী সিংগাইরের যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ও স্থানীয় সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান স্বর্ণ ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, “আমরা প্রতিদিন ভয়ে থাকি। রাজনৈতিক শেল্টারে থাকা একটি চক্র ও ভুয়া পরিচয়ে ডিবি, পুলিশ সেজে আমাদের টার্গেট করছে। থানায় অভিযোগ করলেও স্বর্ণ ফেরত পাওয়া যায় না।”

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, “সম্প্রতি ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। মূল হোতারা এখনো ধরা পড়েনি। তবে খোকন নামের মূল হোতা মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে আছেন। তার লোকেশন ট্র্যাক করা হয়েছে। শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।”

তিনি জানান, আগের পৃথক দুটি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত

আরিচা ঘাটে স্বর্ণ ছিনতাকারীদের ‘দাপট’

আপডেট সময় : ১০:৩৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫

মানিকগঞ্জের আরিচা স্পিডবোট ঘাটে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এখন ভয়ে-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। যাত্রী পরিবহণের কেন্দ্রস্থলটি পরিণত হয়েছে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের নিরাপদ ঘাঁটিতে। গত দুই বছরে এখানে একের পর এক স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত খোয়া গেছে ১৩৫ ভরি স্বর্ণ। অথচ উদ্ধার হয়নি কিছুই। রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে বলীয়ান চক্রের দাপটে ঘাটজুড়ে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

আরিচা স্পিডবোট ঘাট থেকে গত ১৩ আগস্ট সিংগাইরের গোবিন্দল বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমানের কাছ থেকে পাঁচ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই হয়। তিনি স্বর্ণ নিয়ে পাবনার ঈশ্বরদী যাচ্ছিলেন। আরিচা স্পিডবোট ঘাটে পৌঁছামাত্র সংঘবদ্ধ চক্র তার কাছ থেকে স্বর্ণ ছিনতাই করে বীরদর্পে চলে যায়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঘাট এলাকার সাজাহান, সজল ও ইসরাফিল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হলেও মূল হোতা খোকন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, স্বর্ণ ছিনতাইকারীরা পেশায় কেউ সিএনজি ও ট্রাক চালক। তবে এরা আগে থেকে ঘাট এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে সম্পৃক্ত ছিল। আটক এক ছিনতাইকারী স্থানীয় এক বিএনপি নেতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তাই খোয়া যাওয়া স্বর্ণ থেকে এক আনা স্বর্ণও উদ্ধার হয়নি বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।

১ জুন ২০২৪ : সিংগাইরে নবাবগঞ্জের সুমন বৈদ্য নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ করে ৯৫ ভরি স্বর্ণ ছিনতাই করা হয়। এ ঘটনায় পাঁচজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা।

জানা যায়, ঘটনার দিন সকালে ঢাকার দোহারের জয়পাড়া বাজারের ‘নির্ঝর অলঙ্কার নিকেতন’-এর মালিক সুমন বৈদ্য ৯৫ ভরি স্বর্ণ বিক্রির জন্য অটোরিকশা করে সিংগাইরের চারিগ্রাম বাজারে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন ও অটোরিকশাচালক ছিলেন। নবাবগঞ্জের নয়নশ্রী থেকে র‌্যাবের স্টিকারযুক্ত একটি মাইক্রোবাস তাদের পিছু নেয়। অটোরিকশা আমতলা গ্রামে পৌঁছালে মাইক্রোবাস থেকে পাঁচজন নেমে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে তাদের তিনজনকে গাড়িতে তোলে।

এরপর তাদের চোখ-মুখ বেঁধে স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়। গাড়িটি আমতলা বাজার অতিক্রমের সময় যানজটে আটকা পড়ে। এসময় গাড়ি থেকে চিৎকার দেন ওই তিনজন। স্থানীয়রা ভেতরে তিনজনকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখে গাড়িটি ঘিরে ধরেন। পরিস্থিতি বুঝে একজন স্বর্ণ নিয়ে পালিয়ে যায়। বাকি পাঁচজনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা। পরে গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে ৪৮ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার করা গেলেও মূল হোতারা আড়ালেই থেকে যায়।

১৬ জুলাই ২০২৪ : সিংগাইরের গোবিন্দলের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ৭০ ভরি স্বর্ণের সাতটি বার নিয়ে আরিচা স্পিডবোট ঘাট হয়ে পাবনার ঈশ্বরদী যাচ্ছিলেন। শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাসের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা তাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে ওই স্বর্ণ লুট করে এবং দিনভর তাকে আটকে রেখে।

উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি অসিয়ার রহমান সিকো ছিলেন স্বর্ণ লুটের মূল হোতা। পুলিশ ওই স্বর্ণ আর উদ্ধার করতে পারেনি। তবে তৎকালীন মানিকগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ, ঘিওর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জনি ও সিংগাইর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সায়েদুল ইসলাম ছিনতাইকারীদের আড়ালে রেখে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ‘আপস মীমাংসা’ করে নেন। সেই স্বর্ণ শেষ পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি।

১৮ অক্টোবর ২০২৪ : সিংগাইরের গোবিন্দল জামটি বাজারের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কর্মচারী ওসমান গনী চুয়াডাঙ্গায় ৬০ ভরি স্বর্ণ পৌঁছে দিতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন। ঘটনার দিন সকালে সিএনজি করে সিংগাইর হয়ে মানিকগঞ্জ থেকে আরিচাঘাটের পথে রওনা দেন ওসমান গনী। ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য অভিযুক্ত মো. নুর নবী পূর্বপরিচয় থাকার সুবাদে মোবাইল ফোনে স্বর্ণ বহনকারী ওসমানকে শিবালয়ের উথুলী বাসস্ট্যান্ডে নামতে বলেন। ওসমান ও নুর নবী সেখানে একটি হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করেন।

খাওয়া শেষে ওসমানগনী (স্বর্ণসহ) রিকশা করে আরিচা ঘাটে রওয়ানা দেন। রিকশাটি মহাসড়কের বোয়ালী বড় ব্রিজের কাছে পৌঁছলে মোটরসাইকেলে আসা তিন ব্যক্তি নিজেদের ডিবি পুলিশ দাবি করে ওসমানকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছে থাকা স্বর্ণ অবৈধ বলে অভিযোগ করে। একপর্যায়ে ৬০ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে তারা আরিচার দিকে চম্পট দেয়। পরে শিবালয় থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযুক্ত মো. নুর নবীকে চুয়াডাঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও কোনো স্বর্ণ উদ্ধার হয়নি।

৪ মে ২০২৫ : শুধু আরিচা নয়, মানিকগঞ্জের ছিনতাইকারীরা সীমান্তবর্তী জেলাতেও সক্রিয়। চলতি বছরের ৪ মে দুপুরে সিংগাইরের জয়মন্টপ গ্রামের সুনিল ঘোষের ছেলে শুভ ঘোষকে (৩২) ১ কেজি ১৯২ গ্রাম ওজনের ১০টি স্বর্ণের বারসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আটক স্বর্ণের বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আরিচাঘাট হয়ে শুভ ঘোষ স্বর্ণ নিয়ে ভারতে পাচারকালে যশোরের শার্শায় বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

ভুক্তভোগীরা জানান, শুভ ঘোষ একজন পেশাদারি স্বর্ণ পাচারকারী দলের সদস্য। শুভ ঘোষ সিংগাইরের জয়মন্টপ গ্রামের বাসিন্দা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি মনোরঞ্জন ঘোষের আপন ভাতিজা। শুভ দীর্ঘদিন ধরেই চাচার ক্ষমতার ওপর ভর করে দেদারসে স্বর্ণ পাচার করে আসছিলেন।

ভুক্তভোগী স্বর্ণ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, “আমার কাছ থেকে ৭০ ভরি স্বর্ণ লুট হলেও এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কোনো স্বর্ণ উদ্ধার হয়নি। আর ছিনতাইকারী কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বরং তৎকালীন দলীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি ধামাচাপা দিয়েছে।”

সর্বশেষ ভুক্তভোগী সিংগাইরের যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ও স্থানীয় সদর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান স্বর্ণ ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, “আমরা প্রতিদিন ভয়ে থাকি। রাজনৈতিক শেল্টারে থাকা একটি চক্র ও ভুয়া পরিচয়ে ডিবি, পুলিশ সেজে আমাদের টার্গেট করছে। থানায় অভিযোগ করলেও স্বর্ণ ফেরত পাওয়া যায় না।”

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন বলেন, “সম্প্রতি ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত আছে। মূল হোতারা এখনো ধরা পড়েনি। তবে খোকন নামের মূল হোতা মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে আছেন। তার লোকেশন ট্র্যাক করা হয়েছে। শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।”

তিনি জানান, আগের পৃথক দুটি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের ঘটনায় আদালতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।