সিলেটের ভোলাগঞ্জে আলোচিত ও দৃষ্টিনন্দন সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রে আবারও পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হতে শুরু করেছে। লুট হওয়া পাথর পুনঃস্থাপনে প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা আশা জাগিয়েছে পর্যটকদের। উদ্ধার করা সাদা পাথর বিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে স্বস্থানে। ফলে ধীরে ধীরে স্বরূপে ফিরছে এই এলাকা। আবারও ভিড় জমবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম আমার দেশকে বলেন, সাদা পাথরকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনতে ও পাথর লুট রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব পর্যটকদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে।
তিনি বলেন, আগামী ২৫ আগস্ট বিকাল ৫টার মধ্যে লুট হওয়া সাদা পাথর যেখানে পাওয়া যাবে সেগুলোর নিজ দায়িত্বে প্রতিস্থাপনের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও এটা তদারকি করবেন। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নের মেম্বাররা কোন কোন জায়গায় পাথর লুকিয়ে রেখেছে তা খুঁজে বের করে তথ্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার আগের মতো পর্যটকদের ভিড়ে এলাকাটি মুখর ছিল। ফটো সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম পর্যটন স্পট সরেজমিন ঘুরে এসে জানান, অন্তত ৮-৯ হাজার পর্যটক সাদা পাথরের সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন। এতে স্বস্তি ফিরেছে এখানকার পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের মধ্যেও।
ব্যবসায়ীরা জানান, আগে ছুটির দিনগুলোতে ১২-১৪ হাজার পর্যটক আসতেন। দুই সপ্তাহ ধরে পর্যটক না আসায় তাদের ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দেয়। এখন আবার পর্যটক ফিরতে শুরু করেছেন। পর্যটকরা মন্তব্য করেছেন, সাদা পাথরে আগে যে পরিমাণ পাথর ছিল, তা এখন নেই। লুট হওয়া পাথর আবার আনা হচ্ছে, এটা একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এতে যদি আবারও আগের রূপ কিছুটা ফেরে, ভালো লাগবে।
লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে প্রতিস্থাপনের কাজ চলছে সেখানে। প্রতিদিনই শ্রমিকরা নৌকায় করে পাথর এনে খালি জায়গায় বসাচ্ছেন। টুকরিতে করে পাথর সাজিয়ে রাখা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে।
এ প্রসঙ্গে, আমার দেশ-এর সঙ্গে আলাপকালে নবাগত জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম বলেন, এটা আমাদের জন্য স্বস্তির খবর যে, আবারও পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। তাদের বিশ্বাস বেড়েছে। সাদা পাথর এলাকায় পর্যটকবান্ধব সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা দ্রুততার সঙ্গে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি সবার সহযোগিতা চাই।
এদিকে, পাথর প্রতিস্থাপনের কার্যক্রমটি পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে হচ্ছে কি না প্রসঙ্গে, খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, পাথর ফেলে হয়তো আগের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা যাবে না, কিন্তু ক্ষতিপূরণ যতটুকু করা যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার সাদা পাথর পরিদর্শন করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সাদা পাথরের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্রে ভয়াবহ লুটপাট দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, লুটের ঘটনায় যে দলেরই প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা প্রশাসনের যত বড় কর্মকর্তাই জড়িত থাকুক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, বিজিবি ক্যাম্পের পাশেই সাদা পাথরে ভয়াবহ লুটপাট হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় বিজিবি কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। পর্যটনকেন্দ্রটিকে ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার নির্দেশনা দিন।
এ সময় জ্বালানি ও ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিনহা, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাদা পাথর ফেরতে তিন দিনের আলটিমেটাম প্রশাসনের
কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি জানান, এদিকে লুপ হওয়া সাদা পাথর ফিরিয়ে দিতে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল শনিবার দুপুর ১২টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সর্বসাধারণের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সভায় আরো বলা হয় তিন দিন পরে যদি কারো কাছে সাদা পাথর পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পদ্মসন সিংহ।