বর্তমানে তরুণ-তরুণীদের কাছে বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি একটি আকর্ষণীয় পেশা। ভালো বেতন, দ্রুত পদোন্নতি, সামাজিক মর্যাদা ও চাকরির নিরাপত্তা বিবেচনায় ব্যাংকিং সেক্টরে কাজ করার আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে তাদের মধ্যে। তবে এই পেশায় প্রবেশ করতে হলে প্রয়োজন সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি।
বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি, সরকারি ও বেসরকারি, ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ও বিশেষায়িতসহ মোট ৬১টি ব্যাংক রয়েছে। ব্যাংকগুলো চাকরি প্রত্যাশীদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে বছরজুড়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে প্রচুর শিক্ষানবিশ কর্মী (ট্রেইনি অফিসার) পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে।
স্বভাবতই বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীদের বাড়তি চাপ থাকে। কেননা প্রতিযোগিতা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছরই হাজার হাজার ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছেন। বিশেষত ব্যাংকগুলোতে চাকরি পেতে আবেদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ভাইভা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। ফলে প্রস্তুতিটাও জম্পেশ থাকা চাই। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিলে চাকরি পাওয়া কঠিন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই
বেশিরভাগ বেসরকারি ব্যাংকে আবেদন করতে হলে স্নাতক/স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হয়, বিশেষ করে ব্যবসায় প্রশাসন, অর্থনীতি, গণিত, পরিসংখ্যান, কম্পিউটার সায়েন্স ও ইংরেজি বিভাগ থেকে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থীর একাডেমিক ফলাফল ভালো হওয়া জরুরি।
ব্যাংকভেদে একটু ভিন্ন হলেও বেসরকারি ব্যাংকের চাকরির নিয়োগপ্রক্রিয়া তিন ভাগে বিভক্ত: প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা। সাধারণত প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা একই দিনে নেওয়া হয়। ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৬০-৮০ নম্বর প্রিলিমিনারি এবং ২০-৪০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়।
প্রিলিমিনারিতে প্রশ্ন হয় ইংরেজি, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা, কম্পিউটার ও আইসিটি, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে। তবে কিছু ব্যাংক বাংলা ভাষা ও সাহিত্য থেকেও প্রশ্ন করে থাকে। লিখিত অংশে আসে গণিত, অনুবাদ ও ফোকাস রাইটিং।
প্রিলিমিনারির জন্য প্রস্তুতি
প্রিলিমিনারিতে ভালো করতে হলে ইংরেজি ব্যাকরণ ও ভোকাবুলারির বিষয়গুলোতে জোর দিতে হবে। ইংরেজির বেসিক ও ব্যাকরণে স্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে। গণিত ও মানসিক দক্ষতা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। গণিতে ভালো করতে হলে অনুশীলনের বিকল্প নেই। শতকরা, লাভ-ক্ষতি, গড়, সুদ-আসলে হিসাব, অংকের ধারা, ভগ্নাংশ, বীজগণিত ইত্যাদি বিষয়ে ভালো দখল থাকতে হবে। সাধারণ জ্ঞানে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে সাম্প্রতিক ও ট্র্যাডিশনাল খবর, অর্থনীতি, রাজনীতি, ব্যাংকিং সেক্টর, বিশ্ব অর্থনীতি থেকে কিছু প্রশ্ন আসে। কম্পিউটার ও আইসিটিতে আলোচিত প্রযুক্তি, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট, এক্সেল, কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ ও ইন্টারনেট নিয়ে প্রশ্ন হয়।
লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি
লিখিত অংশে আসে গণিত, অনুবাদ ও ফোকাস রাইটিং। এই অংশে নম্বর কম হলেও এটি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে গণিত ও অনুবাদে পূর্ণ নম্বর পাওয়া সম্ভব। গণিতের জন্য বিগত বছরের প্রশ্নগুলোর সমাধান ও বিষয়ভিত্তিক নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। ইংরেজির জন্য অনুবাদ ও ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো বিষয়ে বাংলা থেকে ইংরেজি এবং ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করার দক্ষতা থাকতে হবে।
ভাইভা প্রস্তুতি
ব্যাংকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাকরির ভাইভা (সাক্ষাৎকার) হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি শুধু জ্ঞানের পরীক্ষা নয়—আপনার আত্মবিশ্বাস, আচরণ, যোগাযোগ দক্ষতা এবং পেশাগত প্রস্তুতির একটি পরিপূর্ণ মূল্যায়ন। নিজের শিক্ষাগত পটভূমি, ব্যাংক বিষয় এবং সাম্প্রতিক অর্থনীতি, নিজ জেলা, বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, আর্থিক কার্যাবলি ইত্যাদি বিষয়ে ভাইভায় জানতে চাওয়া হয়। ব্যাংকিং পেশায় কেন আসতে চান, পঠিত বিষয়ের সঙ্গে ব্যাংকিং পেশার সাদৃশ্য ইত্যাদি বিষয়ে নিজের যুক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে উত্তর দেওয়া ভালো। তবে ভাইভা বোর্ড যে ভাষায় প্রশ্ন করবে (বাংলা বা ইংরেজি), সে ভাষাতেই উত্তর দেওয়া উত্তম।