বরগুনার আমতলী উপজেলায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা চলছে মাত্র দুজন চিকিৎসক দিয়ে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৩১টি চিকিৎসকের পদের মধ্যে ২৯টিই শূন্য। ফলে গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা।
উপজেলা সদর ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আরও কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, কুকুয়া ইউনিয়নের আজিমপুর বাজারে ১০ শয্যার হাসপাতাল ১টি, এবং আঠারগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর বাজারে ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের গুলিশাখালী বাজারে ১টি করে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হলদিয়া ইউনিয়নের সেনের হাটে ১ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মোট ৩১ জন ডাক্তারের পদ থাকার কথা থাকলেও চিকিৎসক সংকটের কারণে এই সব কেন্দ্রগুলোতে কার্যত চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১২ ডিসেম্বর আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে ডা. ফায়জুর রহমান যোগদান করলেও সেদিন বিকাল থেকেই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তাকে পাঁচবার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো এবং বেতন-ভাতা বন্ধ রাখা হলেও তার কোনো সাড়া মেলেনি। তিনি বর্তমানে কোথায় আছেন, তাও জানা যায়নি।
বর্তমানে, আমতলী হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ডাক্তার রোকনুজ্জামান ও ইউনানী চিকিৎসক মো. মাসুম শত শত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার প্রশাসনিক কাজের পাশাপাশি নিয়মিত ডিউটি ডাক্তার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্যান্য পদেও কর্মী সংকট
চিকিৎসকের পাশাপাশি অন্যান্য পদেও তীব্র কর্মী সংকট রয়েছে। প্রধান সহকারী, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী, পরিসংখ্যানবিদ, বিভিন্ন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার, কার্ডিওগ্রাফার, স্টোর কিপার, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ড্রাইভারসহ মোট ৮৮টি তৃতীয় শ্রেণির পদের মধ্যে ৫২টি এবং ৩৪টি চতুর্থ শ্রেণির পদের মধ্যে ১৬টি খালি। এই সংকট হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজ ও পরিচ্ছন্নতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন দিক সামলাতে তাদের প্রচণ্ড বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি এই সংকট নিরসনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক চেয়েছেন।
বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মো. আবুল ফাত্তাহও জানান, তারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিষয়টি জানিয়েছেন এবং দ্রুত চিকিৎসক চেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, দূরবর্তী এলাকার চিকিৎসকদের পদায়ন করা হলে তারা এখানে থাকতে চান না। তাই স্থানীয় চিকিৎসকদের নিয়োগ দিলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।